কাঠমান্ডুতে হাজারো তরুণের সমাবেশে উত্তাল হয়ে উঠেছে নেপাল। সরকারের জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে জেন-জি প্রজন্মের প্রতিবাদ এখন দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা স্ন্যাপচ্যাট নিষিদ্ধ হলেও টিকটক ও ভিপিএন ব্যবহার করে তারা ছড়িয়ে দিচ্ছেন নিজেদের বার্তা।
‘নেপো কিডস’ থেকে রাস্তায় নামা
এই ক্ষোভ হঠাৎ জন্ম নেয়নি। এর আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় আসে “নেপো কিডস” ট্রেন্ড, যেখানে রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনের ছবি ভাইরাল হয়। এতে প্রকাশ পায় কথিত দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। সেই ট্রেন্ড থেকেই ধীরে ধীরে জন্ম নেয় এক পূর্ণাঙ্গ তরুণদের আন্দোলন।
কীভাবে ছড়াল প্রতিবাদের বার্তা?
সোশ্যাল মিডিয়া ব্লক করলেও তরুণরা বিকল্প পথ বেছে নেন। ভিপিএন আর টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তারা দেশব্যাপী সমাবেশের ডাক দেন। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) শুধু কাঠমান্ডুতেই হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।
আরো পড়ুন: নেপালে সামাজিক মাধ্যম বর্জনের প্রতিবাদে দফায় দফায় সংঘর্ষ, হোম মিনিস্টার পদত্যাগ, ১৯ জন নিহত
সহিংসতায় নিহত ১৯ জন
প্রতিবাদ চলাকালে সহিংসতায় রূপ নেয় পরিস্থিতি। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারান অন্তত ১৯ জন। এরপর আরও জোরালো হয় সরকারের বিরুদ্ধে তরুণদের ক্ষোভ। চাপের মুখে পদত্যাগ করেছেন নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ক্ষোভ শুধু নিষেধাজ্ঞায় সীমাবদ্ধ নয়
প্রতিবাদকারীরা শুধু সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধের বিরোধিতা করছেন না; তারা সরকারের বিভিন্ন চুক্তি ও দুর্নীতির অভিযোগও তুলছেন। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা নেপাল এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস কেনা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। তরুণরা বলছেন, তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, আর সেই হতাশাই আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।
সরকারের যুক্তি কী?
সরকার বলছে, ফেসবুকসহ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মগুলো নেপালে ব্যবসা করলেও কর দিচ্ছে না। জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় তাই এই অ্যাপগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি প্রতিবাদকারীদের আখ্যা দিয়েছেন “কেবল বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করা ক্রীতপুতুল” হিসেবে।
কিন্তু বাস্তবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যান তরুণদের ক্ষোভ আরও তীব্র করেছে। এখন পুরো আন্দোলন স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক বড়সড় প্রতিবাদের রূপ নিয়েছে।