সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ভোটের আগে বাড়ছে চাপ। আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি এগোলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা। প্রধান তিন রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি-সরকার ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন কমিশন ও উপদেষ্টাদের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরকারের নিরপেক্ষতা এখন রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকলেও, প্রশাসনের ভূমিকা ও নির্বাচন কমিশনের আচরণ নিয়ে বিরোধী দলগুলো একের পর এক প্রশ্ন তুলছে।
মঙ্গলবার ও বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি তাদের উদ্বেগ জানায়। দলগুলো অভিযোগ করেছে, সরকারের কিছু উপদেষ্টা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার আচরণ নির্বাচনের পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
‘জুলাই সনদ’ ও গণভোট নিয়েও মতভেদ
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন ও গণভোটের সময়সূচি নিয়েও দেখা দিয়েছে মতপার্থক্য। বিশ্লেষকদের মতে, এসব ইস্যুতে ঐকমত্য না হলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা হুমকির মুখে পড়বে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন,বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের নিরপেক্ষতার প্রমাণ সবচেয়ে জরুরি। কোনো উপদেষ্টাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সেটি খতিয়ে দেখা উচিত।”
অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম বলেন,জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অনাস্থা তৈরি হওয়ায় রাজনৈতিক জটিলতা বেড়েছে। সবাইকে নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোই এখন সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
বিএনপি ও জামায়াতের অভিযোগ
বিএনপি তাদের বৈঠকে দুই উপদেষ্টার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানায়। দলটির নেতারা মনে করেন, প্রধান উপদেষ্টা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখলেই কেবল নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হবে।
আরো পড়ুন : ৬০ আসনে নির্ভার বিএনপি, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন,প্রধান উপদেষ্টার ওপর আমাদের আস্থা আছে, কিন্তু তার আশপাশের কিছু মানুষ একটি বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করছে।
তিনি অভিযোগ করেন,প্রশাসন ও আইন বিভাগে এখনো প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ কর্মকর্তা একটি দলের প্রভাবে কাজ করছেন।”
এনসিপির দাবি ও বিশ্লেষকদের পরামর্শ
এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন,নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে উপদেষ্টা পরিষদের নিরপেক্ষতা ও নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন জরুরি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি ইতিবাচক হলেও সরকারের উচিত নিরপেক্ষতা নিয়ে যেকোনো প্রশ্নকে গুরুত্বসহকারে দেখা এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।
তাদের মতে, জুলাই সনদ ও গণভোটের সময়সূচি নিয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলার পাশাপাশি যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে, তাদের বিষয়ে স্বচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়াই এখন সরকারের দায়িত্ব।

