নগদ একাউন্ট হ্যাক বা নগদ থেকে ভাতার টাকা চলে গেলে যা করণীয় ২০২৪
বর্তমনে বাংলাদেশ সরকার কতৃপক্ষ সকল ভাতার টাকা নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমে প্রদান করে থাকেন। যেমন: বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, পঙ্গু ভাতা, স্টুডেন্ট উপবৃত্তি সহ সকল ভাতা প্রদান করে নগদের মাধ্যমে। কিন্তু এক দল প্রতারক চক্র সেই সকল ভাতা প্রাপ্তদের টার্গেট করে বিভিন্ন উপায় তাদের থেকে নগদ একাউন্ট হ্যাক করে তাদের সকল টাকা চুরি করে নিচ্ছে।
তাই আজকের পোস্টে কিভাবে নগদ একাউন্ট হ্যাক করে? কি করলে নগদ একাউন্ট হ্যাক হবে না? আর যদি নগদ একাউন্ট হ্যাক হয় তাহলে কি করবেন? নগদ থেকে টাকা নিলে তা কিভাবে ফেরত আনবেন সকল বিষয় বিস্তারিত জানুন:
এই পোষ্টের শিরোনামঃ
নগদ কি?
নগদ হল বাংলাদেশ পোস্ট অফিস মনে ডাক বিভাগের একটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা মাধ্যম। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা হলো বিকাশ আর বিকাশ এর পর পরই ২য় স্থানে রয়েছে নগদ।
কেন নগদ একাউন্টে ভাতার টাকা প্রদান করে
২০২০ সালের মহামারি সংক্রান্ত এর কারনে সকল সরকারি ভাতা প্রদান করতে সক্ষম হচ্ছিল না আর তখনই এর দায়িত্ব নেয় নগদ ডাক বিভাগের মেবাইল ব্যাংকিং। তখন তারা দেড় কোটি শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরন ভাতা তাদের মোবাইলে পাঠানো হয়। এবং বিভিন্ন সরকারি সহায়তা ভাতা ১ কোটি মানুষের কাছে পাঠিয়ে দেয় মোবাইল ব্যাংকিং গুলো। আর এইভাবেই নগদ জায়গা করে নেয় সকল সরকারি ভাতা প্রদান করার ক্ষেত্রে।
হ্যাক কি?
হ্যাক হল তথ্য ডেটা চুরি করা। আর এই হ্যাক আপনি নিজে যত সময় ইনফরমেশন দিবেন না তত সময় কেউ আপনার একাউন্ট হ্যাক করতে পারবে না।
কাদের নগদ একাউন্ট হ্যাক হয়
মূলত সবার নগদ একাউন্ট হ্যাক হয় না। নগদ একাউন্ট গুলো হ্যাক করা হয় মূলত টার্গেট করে। বিষেশ করে যারা সহায়তা ভাতা পায় যেমন: বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, পঙ্গু ভাতা, স্টুডেন্ট উপবৃত্তি এই সকল গ্রাহককে টার্গেট করে হ্যাকার গ্রুপ।
হ্যাকাররা কিভাবে ভাতা প্রদানের নগদ একাউন্ট পায়
এটা স্পষ্ট নয় যে তারা কিভাবে বেছে বেছে বের করে যারা ভাতার টাকা পায় তাদের নগদ একাউন্ট। তবে আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যে এই ভাতা প্রাদান গ্রাহকের নগদ একাউন্ট তৃতীয় পক্ষ কালেক্ট করে দেয়। মূলত যারা এই ভাতার টাকা প্রদান এর মাধ্যম হয়ে কাজ করে তারাই সকল ইনফরমেশন দেন অথবা তাদের ডাটা কালেক্ট এর মধ্যে দুর্বলতা আছে।
কোন ফোন ব্যাবহারকারীর নগদ একাউন্ট হ্যাক হয়
যারা বাটন ফোন ব্যাবহার করেন তাদের ৯৫% ফোনের নগদ একাউন্ট হ্যাক হয়ে থাকে। কারন যারা সরকারি ভাতা পায় তাদের অধিকাংশ মানুষ বাটন ফোন ব্যাবহার করে থাকেন। আর বাটন ফোনে নগদের এক্সেস থাকে না। নগদ ২টি সিস্টেমে ব্যাবহার করা যায়: ১. USSD কোড দিয়ে ২. Apps এর মাধ্যমে। আর যারা বাটন ফোন ব্যাবহার করে তাদের এপসের এক্সেস থাকে না ফোনে। তাই সেই একাউন্ট স্মার্টফোনে এক্সেস করে নিতে পারে।
কিভাবে নগদ একাউন্ট হ্যাক হয়
হ্যাকার মূলত যারা ভাতা পায় তাদের সকল ইনফরমেশন ডাটা কালেক্ট করে নিয়ে। যে নাম্বারে নগদ একাউন্ট রয়েছে সেই নাম্বারে তারা ফোন করে। তবে তাদের রিয়েল নাম্বার দিয়ে ফোন করে না। তারা ফোন করে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন এর বিভিন্ন Apps এর মাধ্যমে। যেটা অনেকেই অফিসের নাম্বার ভেবে থাকে। যেমন তাদের মোবাইল নাম্বার শুরু থাকে +88096 দিয়ে।
ধাপ-১: হ্যাকার প্রথমে ফোন করে সেই নগদ কার নামে! কোন ধরনের ভাতা পায়! এবং কোথায় ঠিকানা এই সকল বলে অফিসার হিসেবে অথবা হেল্পলাইন হিসেবে।
ধাপ-২: হ্যাকার আপনাকে কিছু জ্ঞানমূলক কথা বলে আপনাকে তাদের আওতায় নিবে।
ধাপ-৩: আপনার নগদ একাউন্টের কিছু একটা সমস্যা হইয়ে এই রকম কিছু বলবে।
ধাপ-৪: অফিসে নতুন বই করতে হবে।
ধাপ-৫: আপানার পুরাতন পিন নাম্বার কাজ করবে না তাই নতুন পিন দিতে হবে।
ধাপ-৬: আপনার নগদ রেজিষ্ট্রেশন বাতিল হতে পারে।
ধাপ-৭: আপনাকে কিছু একটা উৎসবের বোনাস দিতে চাইবে।
ধাপ-৮: আবার হয়ত ভুল করে টাকা চলে গেছে সেই একটা গল্প বলবে।
ধাপ-৯: আবার এনআইডির নাম্বার পাঠিয়েছি মেসেজে সেই নাম্বারটি বলুন এটাও বলতে পারে।
আরো বিভিন্ন ধরনের হুমকি বা সমস্যার কথা বলতে পারে।
তারা কিন্তু আপনার পিন নাম্বার চাইবে না। তারা মূলত আপনার ফোনে একটি SMS কোড পাঠাবে সেই কোডটি জানতে চায়। আর তারা শুধু এই কোডটি নিয়ে নগদ একাউন্ট হ্যাক করে।
তারা এই এসএমএস এর কোডটির কথা সরাসরি বলেন না। তারা বিভিন্ন ধরনের টেকনিক দিয়ে আপনার থেকে কোডটি নিবে।
অনেকে ভাবে যে আমিতো পিন নাম্বার দিচ্ছি না কোড দিলে কি হবে।
হ্যাকার নগদের এসএমএস কোড নিয়ে কি করে
হ্যাকার আপনার থেকে বিভিন্ন কৌশলে কোড নাম্বার নিবে। আর এই কোড হলো নগদ একাউন্ট লগইন করার কোড। হ্যাকার সার্ভার ব্যাবহার করে নগদ একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড রিসাট দেয়। রিসাট দিলে আপনার ফোনে যে কোড দিবে সেই কোড আপনি বললে তাকে সে কোডটি দিয়ো নতুন একটি পাসওয়ার্ড দিয়ে ফেলে। এর ফলে নগদ একাউন্ট তার কন্টোলে থাকে এবং হ্যাকার নগদ একাউন্টের মধ্যে যত টাকা থাকে তা তুলে ফেলে।
নগদ একাউন্ট হ্যাক হলে করণীয়
যদি আপনার কাছ থেকে কেউ কোড নিয়ে নেয়। বা আপনি কোডটি বলে থাকেন তাহলে আপনাকে যা করতে হবে তা হল:
আপনার একাউন্ট হ্যাক করে টাকা নিয়ে গেলে যেসকল পদক্ষেপ নিবেন তা নিচে আলোচনা করা হল:
১. যদি নগদ একাউন্টের টাকা নিয়ে যায় তাহলে আপনি প্রথমেই নগদ কাস্টম কেয়ারে ফোন করুন 16167 অথবা 09609616167 এই নাম্বারে। ফোন করে তাদের সকল কিছু বিস্তারিত বলুন। তারা দেখবে যে আপনার একাউন্টের টাকা অন্য কোন নাম্বারে নিয়ে গেছে। সেই নাম্বারের একাউন্টে যদি টাকা থাকে তাহলে কিছু সময়ের জন্য তার একাউন্ট লক করে দিবে।
২. কাস্টম কেয়ারে কথা বলে তখনই পিন নাম্বার পরিবর্তন করে নিবেন। এবং আগের পিন নাম্বার ছাড়া নতুন একটা পিন আপনি দিয়ে দিবেন।
৩. পুলিশের কাছে জিডি করুন। অনলাইনে জিডি করা যায় অথবা আপনার কাছের থানায় গিয়ে যোগাযোগ করুন। আপনি যেখানে থাকুন না কেন তার আশেপাশে অবশ্যই থানা থাকবে সেখানে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানান। তাহলে পুলিশ আপনার টাকা ব্যাক এনে দিবে।
৪. যে নগদ একাউন্ট হ্যাক করবে সেই সিমটি একটি স্মার্টফোনে ঢুকিয়ে। নগদ অ্যাপস ডাউনলোড করে ইনস্টল করুন। এবং নগদ এপে সেই নাম্বার দিয়ে লগইন করুন। আর যদি স্মার্টফোনেই থাকে তাহলে আবার লগইন করুন। একটা নগদ এপসে একটাই নগদ একাউন্টের আক্সেস থাকে তাই হ্যাকারের আক্সেস চলে গিয়ে আপনার ফোনে একটিভ থাকবে। তাহলে দ্বিতীয় বার হ্যাক বা টাকা চলে যাওয়ার সম্ভবনা থাকবে না।
শুধু নগদ একাউন্ট হ্যাক হলে করণীয়
আর যদি আপনার নগদের শুধু কোড নেয় কিন্তু টাকা নেয় নি এবং আপনার পিন নাম্বার কাজ করে না। তাহলে আপনি নগদ হেল্পলাইনে কথা বলে আগে পিন নাম্বার পরিবর্তন করে নিবেন। তারপর একটি স্মার্টফোনে নগদ এপসে সেই একাউন্ট লগইন করুন। তাহলে হ্যাকার আপনার একাউন্টের এক্সেস হারিয়ে ফেলবে আর টাকা নিতে পারবে না।
অতএব, যদি কেউ আপনাকে ফোন দিয়ে এই ধরনের নগদ বিষয় কথা বলে তাহলে সাথে সাথে ফোন কেটে দিবেন। পারলে কয়টা ব*কা দিয়েন কিন্তু কোড বইলেন না। তাই কখনো অপরিচিতদের কাছে কোড বলবেন না। পিন নাম্বার ততটা প্রয়োজন না যতটা কোড নাম্বার প্রয়োজন। তাই নিজে সর্তক হোন অন্যকে সাবধান করুন এই ধরনের প্রতারক চক্র থেকে।
সর্বশেষে:
এই ধরনের সকল মোবাইল ব্যাংকিং এর সকল টিপস পেতে আমাদের গুগল নিউজ ফলো করে রাখুন।