বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিচিত মুখ জাভেদ ওমর বেলিম যিনি ব্যাট হাতে বহু বছর দেশের জার্সিকে গর্বিত করেছেন। তাঁর সুস্বাদু টেকনিক, দীর্ঘ ইনিংস খেলার দক্ষতা ও শান্ত মেজাজ তাঁকে ক্রিকেটে এনে দিয়েছে অনন্য পরিচিতি। কিন্তু এবার গল্প ক্রিকেটের নয়, ফুটবলের।
আর সেটাই সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়।এক সময়ের জাতীয় দলের এই টেস্ট ক্রিকেটার এবার মাঠে নেমেছেন ফুটবল দলের কোচ হিসেবে আর তাঁর অধীনেই দলটি জিতেছে ৭-০ গোলে।
এ যেন ক্রিকেটের শান্ত অথচ ধৈর্যের প্রতীক জাভেদ ওমর, এবার ফুটবলে দাঁড়ালেন আক্রমণাত্মক কৌশলের এক অনন্য পরিকল্পনাকারী হয়ে।
ম্যাচের প্রেক্ষাপট- প্রীতি ম্যাচ, কিন্তু উত্তেজনা প্রবল
এ ম্যাচটি ছিল একটি স্থানীয় প্রীতি আয়োজন, যেখানে অংশ নেয় দুই অঞ্চলের নৈশ–প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফুটবল দল। আয়োজনটি ছোট হলেও প্রত্যাশা ছিল বড়, কারণ খবর ছড়িয়েছিল আজ মাঠে থাকছেন জাভেদ ওমর, কিন্তু ক্রিকেটার হিসেবে নয় দলের ম্যানেজার ও কোচ হিসেবে।
প্রতিপক্ষ দলও বেশ শক্তিশালী। তারা অভিজ্ঞ শারীরিকভাবে সুসংগঠিত এবং স্থানীয় টুর্নামেন্টে ভালো সুনাম রয়েছে। তাই ধারণা ছিল একটি সমান সমান লড়াই হবে।
কিন্তু মাঠে যা ঘটল, তা ছিল একেবারে অন্য গল্প।এ যেন ক্রিকেট মাঠের কৌশল ফুটবলের ঘাসে এসে মিলল, আর তৈরি হলো এক অনন্য জয়যাত্রা।
জাভেদ ওমরের পরিকল্পনা ক্রিকেটারের মাথায় ফুটবলের কৌশল
যদিও তিনি ফুটবলের মানুষ নন, কিন্তু খেলার মনস্তত্ত্ব বোঝেন খুব ভালো। ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের মানসিক প্রস্তুতি বোলারদের লাইন–লেন্থ ফিল্ড সেটিং সবকিছুর মতোই ফুটবলে আছে অবস্থান, ছন্দ, টেম্পো ও আক্রমণ রক্ষণ ব্যালেন্স।
ম্যাচের আগে তিনি দলের সঙ্গে দীর্ঘ সেশন করেন। সেখানে খেলোয়াড়দের বলেন
ফুটবল শুধু পায়ের খেলা না। মাথার খেলা। পজিশন ঠিক থাকলে অর্ধেক ম্যাচ জিতে গেছেন।তিনি তিনটি কৌশল ঠিক করেন।
- হাই প্রেসিং শুরুতেই প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলা।
- উইং–বেসড আক্রমণ দুই পাশ দিয়ে গতি তোলা।
- দ্রুত পাসিং ক্রিকেটের স্ট্রাইক রোটেশন নীতির ফুটবল রূপ।
খেলোয়াড়রা প্রথমে একটু অবাক হলেও দ্রুতই বুঝতে পারে এই ধারণাগুলো কার্যকর হতে পারে।
ম্যাচের শুরু টিমের আগ্রাসন প্রতিপক্ষকে হতভম্ব করে
ম্যাচের বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে জাভেদ ওমরের শিষ্যরা আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের গতি, পাসিং আর সমন্বয় দেখে প্রতিপক্ষ শুরু থেকেই ব্যাকফুটে।মাত্র ১২তম মিনিটেই আসে প্রথম গোল।
ডানপাশের উইং থেকে করা ক্রস ডাইভিং হেডে জালে পাঠান ফরোয়ার্ড রিফাত।
গোলের পর জাভেদ ওমর দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে খেলোয়াড়দের উৎসাহ দেন।এরপরই মাঠে দেখা যায় তাঁর মাইন্ডগেম।তিনি খেলোয়াড়দের বারবার বলছিলেন দ্বিতীয় গোলটাই সবচেয়ে জরুরি। এগিয়ে আছি মানেই থেমে থাকা নয়।
আরো পড়ুন : বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ড প্রথম টি টোয়েন্টিটসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
প্রথমার্ধের শেষের আগেই ৩ গোল
২৫তম মিনিটে আসে দ্বিতীয় গোল। এবার আসে এক দূরপাল্লার শটে।
আর ৩৮তম মিনিটে দল পায় তৃতীয় গোল যা ছিল সত্যিকারের টিম গোল।
পাঁচটি পাসে বল প্রতিপক্ষের বক্সে পৌঁছে, শেষে স্থানীয় ছেলেটি আলিফ পা ছুঁইয়ে দেন জালে।
দলের খেলা দেখে কমেন্ট্রি বক্সে থাকা একজন অভিজ্ঞ ফুটবল কোচ মন্তব্য করেন
দলটা যেন অন্য কোচের দল! অসাধারণ প্রেসিং সমন্বয় দারুণ।
হাফটাইমে জাভেদের বক্তব্য ক্রিকেটীয় অনুপ্রেরণা
হাফটাইমে সবাই যখন পানি খাচ্ছে, তখন জাভেদ শান্ত স্বরে দলের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন
৩–০ ভালো, কিন্তু ফুটবল এখানে শেষ না। ক্রিকেটে যেমন ধরাশায়ী দলও ফিরে আসে ফুটবলেও একই। তাই মনোযোগ না হারায়ো।তিনি খেলোয়াড়দের বলেন তিনটি শব্দ
ফোকাস। গতি। শৃঙ্খলা।
ঠিক ক্রিকেট মাঠে যেমন তিনি নিজে দীর্ঘ ইনিংস খেলতেন, তেমনই তিনি শিখিয়েছেন ফুটবল দলকে দীর্ঘ ম্যাচে হাল ছাড়া যাবে না।
দ্বিতীয়ার্ধ ঝড়ের গতি চার গোলের মহোৎসব
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই আবারও আক্রমণ।
৫০তম মিনিটেই আসে চতুর্থ গোল।
প্রতিপক্ষ তখন ভেঙে পড়ে মানসিকভাবে।
৫৭তম মিনিটে পঞ্চম গোল, ৭২তম মিনিটে ষষ্ঠ গোল।
আর ৮১তম মিনিটে আসে সপ্তম গোল, যা ছিল ম্যাচের সবচেয়ে সুন্দর গোল।
মিডফিল্ডার তামিম বল তুলে দেন বামপাশে থাকা উইঙ্গারকে।
তিনি দুই ডিফেন্ডার কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে নিচু শটে বল পাঠান গোলরক্ষকের ডান পাশের নিচে।
গোলরক্ষক ছুঁতেও পারেননি।
মাঠ তখন উল্লাসে ভেঙে পড়ে।
গ্যালারি দাঁড়িয়ে করতালি দিতে থাকে।
অন্যপাশে নিরুৎসাহ প্রতিপক্ষ দল নিজেদের ভুল খুঁজতে ব্যস্ত।
কিন্তু এই সবকিছুর মাঝেও জাভেদ ওমর ছিলেন শান্ত, মনোযোগী, ক্রিকেটের দিনের মতোই ধারাবাহিক।
ম্যাচ শেষ ৭–০ জয়, জাভেদের কৌশলের জোরালো উপস্থিতি
শেষ বাঁশি বাজতেই খেলোয়াড়রা ছুটে গিয়ে কোচকে ঘিরে ধরে।
তাঁদের চোখে স্বস্তি, আনন্দ, এবং এক ধরনের বিশ্বাসআমরা পারি।
একজন খেলোয়াড় বলেন
স্যার আমাদের বোঝালেন সঠিক পরিকল্পনা আর আত্মবিশ্বাস থাকলে অসম্ভব কিছু নেই।আরেকজন বলেন
জাভেদ ভাই ফুটবলের মানুষ না, কিন্তু খেলা বোঝার বুদ্ধি তাঁর অসাধারণ।
এই মন্তব্যগুলোই প্রমাণ করে, জাভেদ ওমর শুধু একজন ক্রিকেটার নন তিনি একজন কৌশলবিদও।
বিশ্লেষণ কেন এই জয়টি এত বিশেষ
এই ৭–০ জয় গুরুত্বপূর্ণ তিন কারণে
১. দলের মানসিকতা বদলে গেছে
প্রতি আক্রমণে ছিল আত্মবিশ্বাস, যা তৈরি হয়েছে জাভেদের অনুপ্রেরণায়।
২. কৌশলগত পরিবর্তন দক্ষতায় এসেছে
ক্রিকেটীয় চিন্তা ফুটবলের ছকে এসে দারুণ কাজ করেছে।
৩. ভবিষ্যতের পথ উন্মুক্ত
স্থানীয় পর্যায়ে এমন জয় দলকে এগিয়ে দেবে আগামী টুর্নামেন্টে।
জাভেদ ওমরের প্রতিক্রিয়া বিনয়ী শান্ত, স্বাভাবিক
ম্যাচ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন
ছেলেরা খেলেছে, কৃতিত্ব তাদের। আমি শুধু বলেছি মনে সাহস রাখতে।
এটিই তাঁকে আলাদা করে।
ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সময় যেমন অহংবোধ তাঁর মাঝে দেখা যায়নি, ফুটবলেও তেমনই বিনয়ী তিনি।
শেষ কথা ক্রিকেটারের ফুটবলে নতুন গল্প
দল নিয়ে এসে ৭ গোলের দাপুটে জয় এটা সাধারণ ঘটনা নয়।
আর ঘটনা যখন আসে একজন সাবেক জাতীয় ক্রিকেটারের হাত ধরে, তখন তা হয়ে ওঠে আরও অনন্য।
জাভেদ ওমর দেখিয়ে দিয়েছেন মাঠ যাই হোক, খেলার ভাষা একই
পরিশ্রম শৃঙ্খলা, মেধা এবং জয়ের ইচ্ছা।আর এই চার পথ ধরে চললেই জয় আসবেই, যেমন এসেছে আজ ৭–০ গোলের দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে।

