বাংলাদেশে শিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশ আজও বেকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অনুযায়ী বর্তমানে দেশে প্রায় ৩৮ লাখ মানুষ বেকার, যার একটি বড় অংশ তরুণ সমাজ। উচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পরও চাকরি না পাওয়া এখন সাধারণ চিত্রে পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন হলো—সমস্যার মূল কোথায়?
শিক্ষা ব্যবস্থায় দক্ষতার অভাব
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট স্কিলকে আলাদা করে শেখানো হয় না। অথচ বর্তমান যুগে শুধু সিজিপিএ যথেষ্ট নয়। চাকরির বাজারে টিকে থাকতে চাই ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা, প্রবলেম সলভিং, কাস্টমার হ্যান্ডলিংসহ নানা স্কিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশের অধিকাংশ তরুণ এসব দক্ষতায় পারদর্শী নয়, ফলে ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে।
আরো পড়ুন: হলিক্রস স্কুলে ২০২৬ সালের প্রথম শ্রেণির ভর্তি ফরম সংগ্রহ শুরু।
বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকরির বাজারের ফাঁক
চাকরির বাজারে কী ধরনের দক্ষতা দরকার, সে সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সঠিক ধারণা দেওয়া হয় না। ওয়ার্কশপ, সেমিনার বা ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং খুবই সীমিত। ফলে শিক্ষার্থীরা মুখস্থবিদ্যার ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায় এবং নিজের চিন্তাশক্তি বিকাশের সুযোগ হারায়।
বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পরিবর্তিত হয়নি। অনেক শিক্ষার্থী আবার ‘যে কোনো চাকরি পেলেই হবে’—এই মানসিকতায় এগোয়। এতে তাদের প্রতিভা বিকশিত হয় না। কম বেতনের চাকরিতে আত্মতুষ্টি না পেয়ে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন। ব্যবসা করে ভালো আয়ের সম্ভাবনা থাকলেও পুঁজির অভাবে সেটিও সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ প্রোগ্রামে ভর্তি শুরু, এইচএসসি পাসেই সুযোগ
বিসিএস নির্ভরতা ও নেপোটিজম
বাংলাদেশে বিসিএস ক্যাডার হওয়াকে অনেকেই সাফল্যের একমাত্র মানদণ্ড মনে করেন। প্রতিবছর লাখো প্রার্থী পরীক্ষা দিলেও মাত্র ১-২% নিয়োগ পান। বাকিদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। পাশাপাশি, নেপোটিজম বা আত্মীয়স্বজনকে অগ্রাধিকার দেওয়াও চাকরি পাওয়ার পথে বড় বাধা।
সমাধানের পথ
- বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিবিষয়ক সেমিনার ও ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করতে হবে।
- শিক্ষার্থীদের সিভি লেখার দক্ষতা ও প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিংয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।
- প্রশাসনের নজরদারিতে নেপোটিজম বন্ধ করতে হবে।
- তরুণদের শুধু বিসিএসের স্বপ্নে সীমাবদ্ধ না থেকে ফ্রিল্যান্সিং, উদ্যোক্তা হওয়া এবং স্কিল ডেভেলপমেন্টের দিকে মনোযোগী হতে হবে।
- মনে রাখতে হবে, সিজিপিএ সম্মান আনে, কিন্তু স্কিল আনে সম্ভাবনা।