যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার (১৮ আগস্ট) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে এই আলোচনায় থাকবেন ইউরোপের একাধিক প্রভাবশালী নেতা। এরই মধ্যে বৈঠকের আগে জেলেনস্কিকে সরাসরি কড়া বার্তা দিয়েছেন ট্রাম্প।
বৈঠকে কারা থাকছেন?
ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে জেলেনস্কির পাশাপাশি উপস্থিত থাকবেন:
- জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস
- ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ
- যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার
- ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট
- ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে
বিশ্লেষকরা বলছেন, এতগুলো প্রভাবশালী ইউরোপীয় নেতার উপস্থিতি প্রমাণ করে যে ইউক্রেন যুদ্ধ সমাধানে পশ্চিমা বিশ্বের নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা চলছে।
ট্রাম্পের কড়া বার্তা
বৈঠকের আগে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লেখেন:
“প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চাইলে অবিলম্বে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ থামাতে পারেন। অথবা তিনি চাইলে এই যুদ্ধ চালিয়েও যেতে পারেন।”
ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন,
“মনে করুন, এই যুদ্ধ কীভাবে শুরু হয়েছিল। ওবামার আমলে কোনো গুলি ছাড়াই ক্রিমিয়া চলে গিয়েছিল রাশিয়ার হাতে। আর ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কিছু বিষয় কখনোই বদলায় না।”
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যকে অনেকেই জেলেনস্কির ওপর এক ধরনের চাপ হিসেবে দেখছেন।
পুতিনের সঙ্গে আলাস্কা বৈঠক
এর আগে গত শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় এক বৈঠকে বসেছিলেন ট্রাম্প। বৈঠকের পর তিনি কিছুটা বিরক্তিও প্রকাশ করেছিলেন। যদিও ট্রাম্পের প্রশাসন জানিয়েছে, আলাপচারিতা থেকে কিছু “সদর্থক বিষয়” উঠে এসেছে।
ট্রাম্পপন্থী সূত্রগুলো বলছে, সেই আলোচনার ধারাবাহিকতায় জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোমবারের বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ অবসান এবং সম্ভাব্য শান্তি-সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে। যদিও ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে যুদ্ধ অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত।
তবে তাঁর সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্পের অবস্থান ইউক্রেনের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ তিনি বারবার ন্যাটো প্রসঙ্গে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন এবং ইউক্রেনকে ‘যুদ্ধ থামানোর’ আহ্বান জানাচ্ছেন।
ইউরোপের প্রত্যাশা
ইউরোপীয় নেতাদের বড় অংশ চান, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় অন্তত একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হোক। জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্ৎস ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ আশা প্রকাশ করেছেন, জেলেনস্কি ও ট্রাম্প আলোচনায় ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন।
আরো পড়ুন: পুতিনের পাঁচ দাবি নিয়ে ট্রাম্প-জ়েলেনস্কি দর কষাকষি: কোনটি কতটা বাস্তবসম্মত?
তবে ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে আবারো জোর দিয়েছেন-ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে হবে এবং রাশিয়ার আগ্রাসনকে কোনোভাবেই বৈধতা দেওয়া যাবে না।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে তিনি ইউক্রেনের চেয়ে রাশিয়ার অবস্থানকে কিছুটা প্রাধান্য দিচ্ছেন। এতে করে জেলেনস্কির ওপর চাপ তৈরি হতে পারে।
তবে একই সঙ্গে অনেকে মনে করেন, ট্রাম্পের রাজনৈতিক স্টাইল সবসময়ই কড়া ভাষায় শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি সমঝোতার পথ খোঁজেন। তাই সোমবারের বৈঠক পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে, তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক কৌতূহল।
১৮ আগস্টের বৈঠককে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চলছে নানা জল্পনা–কল্পনা। একদিকে ট্রাম্পের কড়া বার্তা, অন্যদিকে ইউরোপীয় নেতাদের সমর্থন-সব মিলিয়ে জেলেনস্কির জন্য এটি হতে যাচ্ছে বড় এক পরীক্ষা। যুদ্ধ থামানো নাকি লড়াই চালিয়ে যাওয়া-এই বৈঠক হয়তো নির্ধারণ করে দেবে ইউক্রেন সংকট কোন দিকে এগোবে।