গত কয়েক দিন ধরে ব্যাপক আলোচনায় রয়েছে জাহানারা আলম। তাঁর করা যৌন হেনস্তার অভিযোগ এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির কাজ মানুষের চোখ আটকে রেখেছে। প্রথমদিকে একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল এবং কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে সম্প্রতি (তারিইকরভাবে) জানা গেছে, জাহানারা তাঁর অনুরোধে এই সময়সীমা বৃদ্ধি পেতে পারে অর্থাৎ তদন্ত পুরোপুরি শেষ করতে আরও সময় দেওয়া হবে। এ খবরটি ক্রিকেট অঙ্গন ও সাধারণ মানুষ উভয়েই আলোচনায় এসেছে। এই সিদ্ধান্ত কেন এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব কি, দেখে নেওয়া যাক।
কেন সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত
সঠিকভাবে তথ্য যাচাই ও প্রমাণ সংগ্রহের জন্য প্রক্রিয়া যেমন সব তদন্তেই প্রযোজ্য, এখানে প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য, দলিল, নথিপত্র, সাক্ষাৎকার, সংশ্লিষ্ট সময় ও জায়গার তথ্য সব কিছুতেই সূক্ষ্মভাবে যাচাই করতে হবে। গোটা প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত হয় তেমন তাড়াহুড়োও উচিত নয়। ভুল বা অসম্পূর্ণ তদন্ত হলে সত্য বেরোনোর আগে অন্যায়ের আশঙ্কা রয়েছে। এমন দিক বিবেচনায় সময় বাড়ানো যুক্তিসঙ্গত মনে হয়েছে।
পক্ষগুলোকে সুবিচার প্রদানের সুযোগ
এই ধরনের গুরুতর অভিযোগে শুধু অভিযোগকারীর কথা বিশ্বাস করে সিদ্ধান্ত নেওয়া বা দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেওয়া নয় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রতিপক্ষ হিসেবে শুনতে হবে পক্ষ পক্ষের যুক্তি ও প্রমাণ মূল্যায়ন করতে হবে। ফলে সময় দিলে উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ সাক্ষাৎকার নেওয়া প্রমাণ যাচাই সবকিছুই সঠিকভাবে করা সম্ভব হবে।
সময় বাড়ানোর সম্ভাব্য প্রভাব
ইতিবাচক দিক ভুল সিদ্ধান্তের আশঙ্কা কমবে। সময় বাড়লে তদন্ত আরও গভীরে যাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রমাণ, সাক্ষাৎকার, দলিল সবকিছু যাচাই করা সম্ভব।বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে। শুধু তাড়াহুড়ো করে প্রতিবেদন দিলে মানুষের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে। সময় বাড়ালে বোঝা যাবে, বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
আরো পড়ুন : তৃতীয় টি টোয়েন্টি এক ভুল ক্যাচেই মিশে গেল স্বপ্ন
উভয় পক্ষের জন্য সুবিচার নিশ্চিত হবে। অভিযুক্তরা সঠিকভাবে শুনতে পারবে, অভিযোগকারীর নিরাপত্তাও নিশ্চিত থাকবে ভুল হলে সংশোধন সম্ভব হবে।
চ্যালেঞ্জ বা নেতিবাচক দিক
অপেক্ষার মধ্যে সময় সামাজিক মানসিক চাপ বাড়তে পারে। গণমাধ্যমে, সোশ্যাল মিডিয়া ও সাধারণ মানুষের মধ্যেও চাপে পড়তে পারেন সংশ্লিষ্টরা।
তথ্য বা প্রমাণ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। সময় দীর্ঘ হলে তথ্য রন্দ্রভূমির মতো হয়, কেউ মুখ বন্ধ রাখতে পারে, প্রমাণ নষ্ট বা ভুল পথে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।অনিচ্ছাকৃত বিরক্তি বা ভুল ধারনা সৃষ্টি হতে পারে। অনেকেই সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে ‘নির্বিরোধ’ বা ‘সময় নষ্ট’ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন।
কেন এখন এই সিদ্ধান্ত মানিয়ে নেওয়া প্রয়োজন
বর্তমানে বিষয়টি শুধুই একটি ক্রিকেট বিষয় নয় এটি নারী খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা মর্যাদা এবং পেশাদার দায়িত্বের প্রতি দৃষ্টান্ত। কোটি কোটি মানুষের মধ্যে এখন আলোচনার বিষয়। যদি তদন্ত তাড়াহুড়ো বা অসম্পূর্ণ হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এমন অভিযোগ উঠলেও কেউ সাহস পাবে না। তাই সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত যদিও চ্যালেঞ্জসাপেক্ষ সঠিক পথ।
এছাড়া, সময় বাড়ানো মানেই নতুন করে বলার, নতুন প্রমাণ খুঁজে পাওয়া, বিষয়টি আরো সহজভাবে বোঝার সুযোগ। একথা মাথায় রেখে, আমাদের প্রত্যাশা থাকবে তদন্ত হবে স্বচ্ছ, ন্যায়সঙ্গত, এবং শেষ পর্যন্ত সত্য যত কঠিনই হোক, সমাজ জানতে পারবে।
জনগণের ভূমিকা ও আমাদের দায়িত্ব
সংবাদমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী, সাধারণ মানুষ এ সময় জরুরি নয় অনুমানভিত্তিক বা গুঞ্জন ছড়ানো। কারণ, এমন গুঞ্জন তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারে।যারা মন্তব্য করেন সেটা করতে হবে দায়িত্ব ও সংযমের সঙ্গে প্রমাণ বা সূত্র ছাড়া মুখে কথা না বলা উত্তম। যারা সংশ্লিষ্ট তদন্তে সহযোগিতা করবে, সত্য উদঘাটনে উদ্যোগী হবে।
এছাড়া, যারা মিথ্যা বা বিভ্রান্ত প্রভাব তৈরি করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে সচেতন থাকতে হবে।
জাহানারার অনুরোধে সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কঠিন হলেও সময়োপযোগী। এটি বিচারিক সুবিচার, তথ্যের যথার্থ যাচাই, এবং ভবিষ্যতে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এক ভালো পদক্ষেপ।
আমরা সবাই আশা করি, এই সময়টা ইচ্ছাকৃত ভাবে নষ্ট করা হবে না যাতে তদন্ত ন্যায়সংগতভাবে হয়, এবং সত্য ফাঁসি পায়।

