বাংলাদেশের জাহাজশিল্পকে পরিবেশবান্ধব ও কর্মপরিপূর্ণ করে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিক নীতি ও আর্থিক সহায়তা বাস্তবায়ন করলে আগামী ৩–৫ বছরের মধ্যে এই খাত থেকে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি এবং ১ লাখ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শনিবার অনুষ্ঠিত পরিবেশবান্ধব জাহাজ নির্মাণ ও শিল্পায়ন শীর্ষক সেমিনারে। এটি আয়োজিত করেছে ব্যবসায়ী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি)।
সেমিনারে প্রধান প্রবন্ধে অর্থনীতিবিদ জাইদি সাত্তার বলেন, বাংলাদেশ বড় জাহাজ নির্মাণে কম প্রতিযোগিতামূলক হলেও ছোট ও মাঝারি জাহাজের বাজারে আমাদের সম্ভাবনা বড়। ১২ হাজার ডিডব্লিউটি ক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টিপারপাস শিপ, ফিডার ভেসেল ও ফেরির বৈশ্বিক বাজার প্রায় ১১৫ বিলিয়ন ডলারের। ২০২৭ সালের মধ্যে যদি বাংলাদেশের শিপইয়ার্ড এই বাজারের ১ শতাংশ দখল করতে পারে, তবে বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের আয় সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের ৮০ শতাংশ বাণিজ্য সমুদ্রপথে হয়। জাহাজ নির্মাণ চাহিদা বিশ্ববাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়লে জাহাজ নির্মাণের চাহিদাও বাড়বে। বাংলাদেশে জাহাজশিল্প একটি শ্রমঘন ও সম্ভাবনাময় খাত। উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনলে আমরা ছোট ও মাঝারি জাহাজের বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারব।
সেমিনারের বক্তব্য
প্রধান অতিথি উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, বিশ্ব এখন পরিবেশবান্ধব জাহাজ চায়। যারা পরিবেশবান্ধব জাহাজ তৈরি করবে, তারাই সামুদ্রিক অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দেবে। শিপইয়ার্ডগুলোর জন্য বৈশ্বিক গ্রিন সনদ, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার ও আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য পরিবেশবান্ধব জাহাজ তৈরিতে সরকার কাজ করবে।
বিশেষ অতিথি আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, শিল্পায়ন নতুন প্রযুক্তি আনে। আমাদের এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় রপ্তানি বৈচিত্র্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাহাজভাঙা শিল্পে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকি থাকলেও এর ইতিবাচক দিকও রয়েছে। শিল্পকে সহায়তা করতে ব্যাংকগুলোকে রিফান্ড গ্যারান্টি ও বিমা নিশ্চিত করতে হবে।
আইবিএফবির সভাপতি লুতফুন নিসা সৌদীয়া খান বলেন, দেশে তৈরি ৫০টির বেশি জাহাজ বিশ্বের ১৮টি দেশের বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। খাত উন্নয়নে ৫০ লাখ ডলারের তহবিল দরকার। পরিবেশবান্ধব অবকাঠামোতে দীর্ঘমেয়াদি স্বল্প সুদে অর্থায়ন ও রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা বাড়ানো হলে ভারত ও ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সহজ হবে।
আইবিএফবির পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশে এই শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত, ক্রোয়েশিয়া জাতীয় দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য কৌশলগত নীতি ও ব্যাংক সহযোগিতা প্রয়োজন।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন আইবিএফবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন রশিদ ও প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী।
আরো দেখুন: হজ নিবন্ধন ফি জমা দেওয়া যাবে ৩৩ ব্যাংকে: ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তালিকা প্রকাশ
বাংলাদেশের জাহাজশিল্পকে পরিবেশবান্ধব ও আর্থিকভাবে শক্তিশালী করলে এটি শুধুমাত্র রপ্তানি খাতের বৃদ্ধি নয়, বড় ধরনের কর্মসংস্থানও নিশ্চিত করতে পারবে।