ভারত চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে মিয়ানমারের কাচিন স্বাধীনতা সেনাবাহিনীর (KIA) সহযোগিতায় বিরল মাটির নমুনা সংগ্রহের চেষ্টা করছে। চীনা প্রক্রিয়াজাত বিরল মাটির রপ্তানি সীমাবদ্ধ করার পর এই পদক্ষেপ ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
কাচিনের মাটিতে ভারতীয় নজর
নিউজ এজেন্সি সূত্রে জানা যায়, ভারতের খনিমন্ত্রী পর্ষদ সরকারী এবং বেসরকারি সংস্থাগুলিকে উত্তর-পূর্ব মিয়ানমারের খনিগুলো থেকে নমুনা সংগ্রহ ও পরিবহনের জন্য নির্দেশ দিয়েছে। এই খনিগুলো কাচিন স্বাধীনতা সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন।
সরকারি খনি সংস্থা IREL এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান Midwest Advanced Materials এই আলোচনায় অংশ নিয়েছে। গত বছর তারা বিরল-মাটির চুম্বকীয় উপাদান তৈরির জন্য সরকারি অর্থায়ন পেয়েছিল।

পরীক্ষার মাধ্যমে মান যাচাই
ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আশা করছে, প্রাপ্ত নমুনাগুলি পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাবে যে এতে পর্যাপ্ত হেভি রেয়ার আর্থ উপাদান রয়েছে কিনা, যা ইলেকট্রনিক ভেহিকেল ও অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তি যন্ত্রে ব্যবহৃত চুম্বক তৈরিতে কাজে লাগে।
আরো পড়ুন: ট্রাম্পের নতুন আদেশ: টিভিতে ওষুধ বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ
কাচিন সেনাদের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা ইতিমধ্যেই ভারতের পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছে এবং বৃহৎ পরিমাণে রপ্তানি সম্ভব কিনা তা যাচাই করছে।
চীনের প্রভাব এবং ভারতের পদক্ষেপ
চীনের কাছে বিরল-মাটির প্রায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। চলতি বছরে চীন প্রধান অর্থনীতিগুলির দিকে প্রক্রিয়াজাত বিরল মাটির রপ্তানি কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগস্ট মাসে মিয়ানমারের সেনাশাসক মিন অং হ্লাইং-এর সঙ্গে বৈঠকে বিরল-মাটি খনির বিষয়টি আলোচনা করেছেন।
IREL ইতিমধ্যেই জাপানি ও কোরিয়ান কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চুম্বকীয় উপাদান উৎপাদন শুরু করার চেষ্টা করছে।
KIA ১৯৬১ সালে মিয়ানমারের কাচিন জাতীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বায়ত্তশাসনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর তারা বিদ্রোহী প্রতিরোধের একটি শক্তিশালী সংগঠন হয়ে উঠেছে। KIA চীনের সঙ্গে বিরল মাটির সরবরাহ সম্পর্ক বজায় রেখেও ভারতীয় উদ্যোগে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
দিল্লি সরকার দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ চ্যানেল তৈরি করতে আগ্রহী, তবে পাহাড়ি ও কম-বিকশিত অঞ্চলের মাধ্যমে বড় পরিমাণে বিরল মাটি পরিবহনের প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। IREL এই আলোচনায় যুক্ত থাকলেও পরিবহন কাজ বেসরকারি সংস্থার হাতে দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারত যদি এই উপাদানগুলো পায়, তা সরাসরি চুম্বক বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্য তৈরিতে ব্যবহার করতে পারবে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য অর্থবহ পরিমাণ উৎপাদনের জন্য সময় এবং প্রযুক্তি উন্নয়নের প্রয়োজন হবে।