মার্কিন আদালতের এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে গুগলকে তার সার্চ ব্যবসা ভাঙতে হবে না। তবে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রতিযোগিতা-বিরোধী কার্যক্রম ঠেকাতে বেশ কিছু কঠোর শর্ত মানতে হবে।
মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারপতি অমিত পি. মেহতা মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছেন, গুগল আর কোনো একচেটিয়া চুক্তি করতে পারবে না, যার মাধ্যমে সার্চ, ক্রোম, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা জেমিনিকে অন্যান্য অ্যাপ বা আয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। যেমন: প্লে স্টোর লাইসেন্স দেওয়ার শর্তে নির্দিষ্ট অ্যাপ ব্যবহার বাধ্য করা বা রাজস্ব ভাগাভাগি নির্ভর চুক্তি করা আর সম্ভব হবে না।
এ ছাড়া গুগলকে কিছু সার্চ ইনডেক্স ও ব্যবহারকারীর ইন্টারঅ্যাকশন ডেটা যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে ভাগ করতে হবে। প্রতিযোগীরা যেন নিজস্ব প্রযুক্তি গড়ে তুলতে পারে, সে জন্য তাদেরকে নির্ধারিত হারে সার্চ ও সার্চ বিজ্ঞাপন পরিষেবা দিতে হবে।
চূড়ান্ত রায় এখনো ঘোষণা করা হয়নি। বিচারপতি মেহতা গুগল ও মার্কিন বিচার বিভাগের (DOJ) সঙ্গে আলোচনা করে আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশোধিত চূড়ান্ত রায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ রায় কার্যকর হলে ছয় বছর বলবৎ থাকবে এবং ৬০ দিন পর থেকে কার্যকর হবে।
২০২0 সালে দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে গত বছর আদালত রায় দিয়েছিল, গুগল বেআইনিভাবে সার্চ বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রেখেছে। এবার তার পরিপ্রেক্ষিতেই নতুন আচরণগত বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ২৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করল ফোর্বস
রায়ের পর অ্যাপলের শেয়ারমূল্য বেড়েছে। কারণ, তাদের লাভজনক গুগল চুক্তি বহাল থাকছে। শুধু ২০২১ সালেই গুগল ২৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হওয়ার জন্য, যার মধ্যে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলারই গেছে অ্যাপলের কাছে। ওই চুক্তির অধীনে গুগল সাফারির বিজ্ঞাপন রাজস্বের ৩৬ শতাংশ অ্যাপলকে দেয়।
দীর্ঘদিন ধরে গুগল অনলাইন সার্চে প্রায় ৯০ শতাংশ বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকার চাইছিল গুগলকে আরও বড় ধরনের শাস্তি দিতে—যেমন ক্রোম ব্রাউজার বা অ্যান্ড্রয়েড বিক্রি করে দেওয়া। তবে আদালতের নির্দেশনা তুলনামূলকভাবে সীমিত।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত শুধু সার্চ নয়, বিজ্ঞাপন প্রযুক্তি ব্যবসার চলমান মামলাতেও প্রভাব ফেলতে পারে। সেই মামলার পরবর্তী শুনানি নির্ধারিত হয়েছে এ বছরের সেপ্টেম্বরে।
যদিও গুগল আপিলের সুযোগ পাবে, বিশ্লেষকদের ধারণা এই লড়াই শেষ হতে আরও কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একই সময়ে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এত বড় দুটি অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা নজিরবিহীন। তাই প্রযুক্তি জগতের জন্যও এই রায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।