গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হলে অনেক নারী ভীত হয়ে পড়েন, কারণ সাধারণভাবে এটি মিসক্যারেজের সঙ্গে যুক্ত করে দেখা হয়। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, সব রক্তপাতই গর্ভপাতের লক্ষণ নয়। অনেক ক্ষেত্রেই প্রথম ২০ সপ্তাহে রক্তক্ষরণ হলেও গর্ভে ভ্রূণ সুস্থ থাকে এবং সময়মতো সন্তানের জন্ম হয়।
স্কয়ার হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আনিকা তাবাস্সুম জানান, প্রথম তিন মাস গর্ভকাল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়। এ সময় অনেক নারীর মিসক্যারেজ ঘটে। তবে হালকা বা মাঝারি রক্তক্ষরণ হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। অনেক সময় ভ্রূণ ঠিক থাকলেও রক্তপাত দেখা দেয়, যাকে বলা হয় থ্রেটেন্ড অ্যাবরশন।
প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ নারী এই অবস্থার সম্মুখীন হন। যদিও শব্দটি ‘অ্যাবরশন’ থাকায় ভয় লাগে, তবে বাস্তবে এর পরও ৫০–৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে সুস্থ শিশুর জন্ম হয়। তাই আতঙ্ক না ছড়িয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়াই এখানে মূল করণীয়।
থ্রেটেন্ড অ্যাবরশনের মূল উপসর্গ হলো যোনিপথে রক্তক্ষরণ। এটি উজ্জ্বল লাল কিংবা বাদামি রঙের হতে পারে। পাশাপাশি তলপেটে টান, কোমরে ব্যথা বা জরায়ুর সংকোচনের মতো অনুভূতিও দেখা দিতে পারে। এসব লক্ষণ কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে।
এই অবস্থার সুনির্দিষ্ট কারণ সবসময় খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে ভ্রূণের জিনগত সমস্যা, মায়ের হরমোনজনিত জটিলতা, ডায়াবেটিস, জরায়ুর গঠনগত ত্রুটি বা টিউমার দায়ী হতে পারে। এছাড়া বেশি বয়সে গর্ভধারণ, ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন বা সংক্রমণও ঝুঁকি বাড়ায়।
চিকিৎসকরা বলছেন, গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা জরুরি। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, তীব্র ব্যথা, জ্বর বা দুর্বলতা দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। এমন অবস্থায় অবহেলা করলে মা ও ভ্রূণ দুজনের জীবনই ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
পরিবারের সদস্যদেরও এখানে সহায়ক ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। নারীর কাজকর্ম বা চলাফেরাকে দোষারোপ না করে বরং মানসিকভাবে তাকে দৃঢ় রাখতে হবে। চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে চলা, বিশ্রাম নেওয়া এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বিরত থাকলেই সুস্থ সন্তান জন্মের সম্ভাবনা বাড়ে।

