বাংলাদেশে জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের পর এক বছর কেটে গেলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে এখনও পরাঘাত বা অস্থিরতা থামেনি। বরং নানা পক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা জিইয়ে রাখছে—যা গণ-অভ্যুত্থানের নৈতিক ভিত্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
৫ আগস্টের পর ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসককে উৎখাত করেছিল। সেই সময়ের সহিংস প্রতিরোধকে অনেকেই বৈধ বললেও পরবর্তী সময়ে সহিংসতা ও মবনির্ভর আন্দোলন অব্যাহত থাকায় অস্বস্তি বেড়েছে। বিভিন্ন স্থানে মাজার, উপাসনালয়, সাংস্কৃতিক স্থাপনা ও সংবাদমাধ্যমে হামলার ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক কর্মসূচিও এখন ‘মব কার্যক্রম’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে গড়ে উঠলেও বাস্তবে প্রতিটি দল রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের আংশিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। অক্সফোর্ডের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্ট্যাথিস ক্যালাভাসের তত্ত্ব অনুযায়ী, এমন পরিস্থিতিতে টার্গেটেড সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনাগুলো সেই আশঙ্কাকেই সত্য করছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্কও নানা মহলে আলোচিত হচ্ছে। পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থানের পর যে সংস্কারের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে গেছে। রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে সংস্কারের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরই এখন বাস্তব প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরো পড়ুন: ফরিদপুরে সংসদীয় সীমানা নিয়ে আবারও মহাসড়ক অবরোধ
সরকার আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও কিছু রাজনৈতিক দলের বক্তব্যে নির্বাচনবিরোধী সুর শোনা যাচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সংস্কারের অজুহাতে নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা আসলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি করবে, যা সহিংসতার ঝুঁকি আরও বাড়াবে। দার্শনিক স্লাভো জিজেকের ভাষায়, “কিছু না করাও একধরনের সহিংসতা।” বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি যেন সেই বাস্তবতার প্রতিফলন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গণ-অভ্যুত্থানের নৈতিক ভিত্তি টিকিয়ে রাখতে হলে এবং পরাজিত শক্তিকে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার সুযোগ না দিতে হলে নির্ধারিত ফেব্রুয়ারির নির্বাচন যথাসময়ে আয়োজন করা জরুরি। অন্যথায় দীর্ঘমেয়াদি সহিংসতা ও অচলাবস্থায় দেশ আরও গভীর সংকটে পড়তে পারে।