বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে। তাঁর শারীরিক জটিলতা ও বয়সজনিত নানা সমস্যা মোকাবিলায় দেশ বিদেশের বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে নিয়মিত। এর ধারাবাহিকতায় এবার যুক্তরাজ্যের একজন প্রখ্যাত হেপাটোলজি ও গ্যাস্ট্রো লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় এসেছেন। তাঁর আগমনকে ঘিরে পুরো রাজনৈতিক অঙ্গন, চিকিৎসাশিল্প এবং বিএনপি সমর্থক মহলে নতুনভাবে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞের আগমন চিকিৎসায় নতুন দিক নির্দেশনা
জানা গেছে, ব্রিটিশ চিকিৎসক ড. রবার্ট হেনরি (ছদ্মনাম) বাংলাদেশের আমন্ত্রণে ঢাকায় এসে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত মেডিকেল টিমের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছেন। হেপাটোলজি ও লিভার কেয়ারে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত এই বিশেষজ্ঞ এর আগে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা ও ভিআইপি রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছেন।
ঢাকায় এসে তিনি প্রথমেই এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ মেডিকেল রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করেন। এরপর তাঁর স্থানীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে অংশ নেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিকল্পনা সম্পর্কে পরামর্শ দেন। বিশেষ করে লিভার সম্পর্কিত জটিলতা রক্তক্ষরণ ঝুঁকি শারীরিক দুর্বলতা এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার ওপর তাঁর বিশেষ নির্দেশনা ছিল।
চিকিৎসা টিমের মতামত উন্নত চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি
খালেদা জিয়ার স্থানীয় মেডিকেল টিমের দায়িত্বশীল চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর রোগগুলো দীর্ঘমেয়াদি এবং জটিল। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের মতামত তাঁদের কাজকে আরও নির্ভুল করতে সহায়তা করবে। ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞের আগমনে একটি সামগ্রিক মূল্যায়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা চিকিৎসার নতুন পথ নির্দেশ করবে।
আরো পড়ুন : ঢাকায় আবার ভূমিকম্প উৎপত্তিস্থল নরসিংদী
তাঁরা আরও জানান, খালেদা জিয়ার কিছু চিকিৎসা দেশে করা সম্ভব হলেও কিছু জটিল চিকিৎসা প্রক্রিয়ার জন্য উন্নত দেশের সুবিধা প্রয়োজন হতে পারে। এ ধরনের আন্তর্জাতিক পরামর্শ এসব সিদ্ধান্ত নিতে গুরুত্ব রাখে।
বিএনপির প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে মানবিক বিবেচনাই মুখ্য
বিএনপি স্থায়ী কমিটির নেতারা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা মানবিক ও চিকিৎসাগত বিষয় এটিকে রাজনৈতিকভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞের আগমনকে তাঁরা ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দলের প্রধানের উন্নত চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে সরকার সহায়ক ভূমিকা গ্রহণ করলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ আরও স্বস্তিদায়ক হবে।
তাঁদের দাবি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা দেশের বাইরে করানোর প্রয়োজন থাকলে সরকারকে মানবিক বিবেচনায় অনুমতি প্রদান করা উচিত। এই আলোচনার মধ্যেই ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞের ঢাকায় আগমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
সরকারের অবস্থান চিকিৎসায় সহযোগিতা অব্যাহত
সরকারের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সরকার বাধা দিচ্ছে এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁরা দাবি করেন, দেশের নিয়ম অনুযায়ী যা যা করা প্রয়োজন, সবই করা হচ্ছে। বিদেশি বিশেষজ্ঞ ডাকতে কোনো বাধা নেই, বরং সেটা চিকিৎসার মান বাড়াতে সহায়তা করে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, আইনের বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব নয়।
জনমতের প্রতিক্রিয়া মানবিক দৃষ্টিকোণে স্বস্তির বার্তা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া মিশ্র হলেও বেশিরভাগই খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছেন। অনেকেই বলছেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও একজন মানুষের চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার অধিকার সবার আগে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের আগমনকে তাঁরা ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
চিকিৎসা অগ্রগতি ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
ড. রবার্ট হেনরির প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে কয়েকটি বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ওষুধ ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও কিছু উন্নত টেস্ট করার সুপারিশ করেছেন, যা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এরপর তিনি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
চিকিৎসকরা মনে করছেন, এই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় একটি নতুন মোড় আনবে। তবে তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাত্রার দরকার আছে কি না সেটি চূড়ান্তভাবে নির্ভর করবে মেডিকেল টিমের রিপোর্ট এবং আইনি সিদ্ধান্তের ওপর।
সারসংক্ষেপ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে চলমান উদ্বেগের মাঝে ব্রিটিশ চিকিৎসকের ঢাকায় আগমন নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই বিশেষজ্ঞের পরামর্শে চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় নতুন অগ্রগতি ও মূল্যায়ন যুক্ত হবে। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই ঘটনাকে অনেকেই মানবিক বিবেচনায় ইতিবাচকভাবে দেখছেন। চিকিৎসার বর্তমান অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ চিকিৎসা পরিকল্পনা নিয়ে সবাই এখন অপেক্ষায় রয়েছে।

