কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বৈশ্বিক দৌড়ে শীর্ষে থাকা ওপেনএআইকে সাম্রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন সাংবাদিক ও লেখক কারেন হাও। তাঁর মতে, ওপেনএআই শুধু অর্থনৈতিক ক্ষমতাই নয়, বরং রাজনৈতিক প্রভাবও বিস্তার করছে—যা একে অনেক দেশের চেয়েও শক্তিশালী করে তুলেছে।
ওপেনএআই ও ‘এজিআই বিশ্বাস’
কারেন হাও তাঁর নতুন বই Empire of AI-তে বলেছেন, কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা (AGI) আজ একধরনের মতাদর্শে রূপ নিয়েছে। ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো যেমন খ্রিস্টধর্মকে সামনে রেখে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল, তেমনি আজকের এআই সাম্রাজ্যের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে AGI-কে মানবকল্যাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া।
তাঁর মতে, ওপেনএআই-এর মিশন শুধু গবেষণা নয়, বরং গতি অর্জন। “যখন বিজয়ী সব পাবে—এমন দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া হয়, তখন গতি হয়ে ওঠে সবচেয়ে বড় বিষয়, নিরাপত্তা বা কার্যকারিতা নয়,” বলেন হাও।
প্রযুক্তি শিল্পে একক আধিপত্য
হাও বলেন, ওপেনএআই এবং অন্যান্য বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান অ্যালগরিদমে আরও বেশি ডেটা ও কম্পিউটার যোগ করছে, যা “বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সস্তা উপায়” হলেও দ্রুত ফল দিচ্ছে। এর ফলে পুরো এআই গবেষণা ক্ষেত্র এখন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর এজেন্ডায় পরিচালিত হচ্ছে, স্বাধীন একাডেমিক গবেষণা থেকে নয়।
আরো পড়ুন: পদ্মা সেতুতে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন শুরু, রেজিস্ট্রেশন ও রিচার্জ যেভাবে করবেন
এই প্রক্রিয়ায় খরচও আকাশচুম্বী হচ্ছে। ওপেনএআই জানিয়েছে, ২০২৯ সালের মধ্যে তারা ১১৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে। গুগল ও মেটাও শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে এআই অবকাঠামোয়।
সুফল বনাম ক্ষতি
AGI-এর স্বপ্নের আড়ালে বাস্তব ক্ষতিগুলোও বাড়ছে বলে সতর্ক করেছেন হাও। যেমন—কর্মসংস্থান হ্রাস, সম্পদ কেন্দ্রীকরণ, মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং উন্নয়নশীল দেশের স্বল্প মজুরির শ্রমিকদের কনটেন্ট মডারেশনে নিয়োগ।
তবে একইসঙ্গে হাও উদাহরণ দিয়েছেন ডিপমাইন্ডের AlphaFold-এর, যা প্রোটিন গঠনের পূর্বাভাস দিয়ে চিকিৎসা গবেষণায় বিপ্লব এনেছে। তাঁর মতে, এই ধরনের এআই-ই বাস্তব সুফল বয়ে আনতে পারে, কারণ এটি পরিবেশগত ক্ষতি বা সামাজিক সংকট তৈরি করে না।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিযোগিতা ও বাস্তবতা
AGI দৌড়ের আরেকটি যুক্তি হচ্ছে চীনকে হারানো। কিন্তু হাও বলেন, বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের ব্যবধান কমেছে, আর সিলিকন ভ্যালির প্রভাব বিশ্বকে উদারতর নয় বরং আরও সীমাবদ্ধ করে তুলেছে।
অর্ধেক অলাভজনক, অর্ধেক লাভজনক কাঠামো ওপেনএআই-এর উদ্দেশ্যকে আরও জটিল করেছে। সাম্প্রতিক মাইক্রোসফট চুক্তির পর সংস্থাটি শেয়ারবাজারে প্রবেশের কাছাকাছি পৌঁছেছে। প্রাক্তন নিরাপত্তা গবেষকরা বলছেন, ওপেনএআই হয়তো এখন মানবকল্যাণের বদলে মুনাফার দিকে বেশি ঝুঁকছে।
কারেন হাও সতর্ক করে বলেন, “যখন একটি প্রতিষ্ঠানের মিশন এতটাই প্রভাবশালী হয়ে ওঠে যে বাস্তবতাকে অস্বীকার করে, তখন সেটি বিপজ্জনক। প্রমাণ যতই জমা হোক যে ক্ষতি হচ্ছে, তারা তবুও নিজেদের বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে।”