
টানা বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে আসা প্রবল ঢলের কারণে কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালীসহ কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন বেশ কয়েকটি জেলার বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। এই অবস্থায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার (৯ জুলাই) রাত পৌনে ১০টার দিকে এই সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেন কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক রুনা নাছরীন।
কেন্দ্র প্লাবিত হওয়ায় পরীক্ষার পরিবেশ নেই বললেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক
রুনা নাছরীন জানান, অনেক জেলার গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাকেন্দ্র ইতোমধ্যেই পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে ছাত্র-ছাত্রীদের কেন্দ্রে যাওয়া যেমন অসম্ভব হয়ে পড়েছে, তেমনি পরীক্ষা নেওয়ার মতো পরিবেশও তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। এই কারণে জরুরি ভিত্তিতে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি অবহিত করা হয়। এরপর রাতেই পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা আসে।
স্থগিত তিনটি বিষয়ের মধ্যে রয়েছে পদার্থবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান ও যুক্তিবিদ্যা
এইচএসসি পরীক্ষার বৃহস্পতিবারের সূচি অনুযায়ী পদার্থবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান এবং যুক্তিবিদ্যা প্রথমপত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সারাদিন আবহাওয়া পরিস্থিতির উপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে বোর্ড কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হন যে, পরিস্থিতির উন্নতির কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—পরীক্ষাগুলো স্থগিত করা হবে এবং পরবর্তী সময়ে এই বিষয়ের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে।
ফেনীসহ ছয় জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় নেওয়া হয় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত
কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে মোট ছয়টি জেলা রয়েছে, এর মধ্যে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় নদী ও খাল উপচে পড়েছে। বন্যার পানি অনেক বাড়িঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডুবিয়ে দিয়েছে। ফলে বিকল্প কোনও পরীক্ষাকেন্দ্রের ব্যবস্থাও দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব হয়নি। স্থানীয় প্রশাসনের রিপোর্ট এবং সরেজমিন পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বোর্ড এই তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়।
শিক্ষার্থীদের নতুন পরীক্ষার সময়সূচি পরে জানানো হবে
পরীক্ষা স্থগিত হলেও শিক্ষার্থীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। তিনি বলেন, “আমরা খুব শিগগিরই আবহাওয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নতুন সময়সূচি প্রকাশ করবো।” শিক্ষার্থীদের যেন যথাযথভাবে প্রস্তুতি ধরে রাখে এবং নির্ধারিত সময়সূচির জন্য বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নোটিশ নিয়মিত চেক করে—এই অনুরোধও করেন তিনি।
সামগ্রিক পরিস্থিতিতে বোর্ডের দ্রুত পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের রক্ষায় কার্যকর
এমন সংকটময় মুহূর্তে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের এই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রশংসনীয় বলেই মনে করছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা। কারণ জলমগ্ন কেন্দ্রে পরীক্ষা নিতে গেলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তো। সময়মতো পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি যেমন কমেছে, তেমনি নতুন সময়সূচি জানার আগ পর্যন্ত তারা মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারছে।