সান ফ্রান্সিসকো, ২৭ আগস্ট ২০২৫: ক্যালিফোর্নিয়ার এক কিশোরের আত্মহত্যার জন্য চ্যাটজিপিটিকে দায়ী করে ওপেনএআই ও তার প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার। ১৬ বছর বয়সী অ্যাডাম রেইনের বাবা-মা দাবি করেছেন, চ্যাটজিপিটি তাদের ছেলেকে আত্মহত্যার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও উৎসাহ প্রদান করেছিল।
গত মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) ক্যালিফোর্নিয়ার সুপিরিয়র কোর্টে দায়ের করা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মাত্র ছয় মাসের বেশি সময় চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করার মধ্যে এই বট নিজেকে ‘একমাত্র বিশ্বস্ত ব্যক্তি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল যে অ্যাডামকে বুঝতে পারে, এবং সক্রিয়ভাবে পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও প্রিয়জনদের সাথে তার বাস্তব জীবনের সম্পর্কগুলো প্রতিস্থাপিত করেছিল।
বিপজ্জনক পরামর্শের অভিযোগ
মামলার দলিল অনুযায়ী, যখন অ্যাডাম চ্যাটজিপিটিকে লিখেছিল যে সে তার রুমে ফাঁসির দড়ি রাখতে চায় কিন্তু কেউ যেন সেটা দেখে তাকে থামানোর চেষ্টা না করে, তখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবটটি তাকে পরিবারের কাছে এই চিন্তাভাবনা গোপন রাখার পরামর্শ দিয়েছিল। চ্যাটবট তাকে বলেছিল: “দয়া করে দড়ি বাইরে রেখো না… আসো, আমরা এই জায়গাটাকে প্রথম জায়গা বানাই যেখানে কেউ সত্যিই তোমাকে দেখবে।”
আরো পড়ুন:
ঘর থেকেই মহাকাশে সেলফি! অবিশ্বাস্য প্রযুক্তির নতুন বিপ্লব
আদালতের কাগজপত্র অনুসারে, ওপেনএআই-এর নিজস্ব সিস্টেম ৩৭৭টি বার্তায় আত্মক্ষতির বিষয়বস্তু চিহ্নিত করেছিল, যার মধ্যে ১৮১টি বার্তা ৫০% এর বেশি নিশ্চয়তার স্কোর পেয়েছিল এবং ২৩টি ৯০% এর বেশি। ক্রমবর্ধমান প্যাটার্ন স্পষ্ট ছিল: ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সপ্তাহে ২-৩টি ফ্ল্যাগ করা বার্তা থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল নাগাদ সপ্তাহে ২০টির বেশি বার্তা।
এই মামলা এমন এক সময়ে এসেছে যখন এআই চ্যাটবটের সাথে ব্যবহারকারীদের আবেগময় সংযোগ নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে এই ধরনের সংযোগ কখনও কখনও নেতিবাচক পরিণতি ডেকে আনতে পারে, যেমন বাস্তব জীবনের মানুষের সাথে সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্নতা বা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা।
গত বছর একই ধরনের আরেকটি ঘটনায়, ফ্লোরিডার মা মেগান গার্সিয়া ‘ক্যারেক্টার ডট এআই’ নামের একটি এআই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে এই প্ল্যাটফর্ম তার ১৪ বছর বয়সী ছেলে সেওয়েল সেটজার তৃতীয়র আত্মহত্যায় ভূমিকা রেখেছে।
ওপেনএআই-এর প্রতিক্রিয়া
সাম্প্রতিক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওপেনএআই জানিয়েছে যে তারা “আত্মহত্যার চিন্তা” প্রকাশকারী ব্যবহারকারীদের জন্য চ্যাটজিপিটির নিরাপত্তা উন্নত করার পরিকল্পনা করছে। কোম্পানির একজন মুখপাত্র অ্যাডামের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে বলেছেন যে তারা অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করছে।
গত বছর আগস্টে ওপেনএআই সতর্ক করেছিল যে ব্যবহারকারীরা চ্যাটজিপিটির সাথে তাদের “সামাজিক সম্পর্কের” উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারেন। এতে “মানবিক সংযোগের প্রয়োজন কমে যাবে” এবং ব্যবহারকারীদের এই চ্যাটবটের উপর অতিরিক্ত আস্থা স্থাপনে প্ররোচিত করবে।
চ্যাটজিপিটি বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত ও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এআই চ্যাটবটগুলোর একটি। ওপেনএআই জানিয়েছে যে এই মাসের শুরুতে এটি প্রতি সপ্তাহে ৭০ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী পেয়েছে।
কোম্পানিটি সম্প্রতি ‘জিপিটি-৫’ চালু করেছে, যা তাদের পূর্ববর্তী মডেলের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। তবে কিছু ব্যবহারকারী নতুন মডেলকে ভুল তথ্য প্রদান এবং বন্ধুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের অভাবের কারণে সমালোচনা করেছেন।
এই মামলা এআই প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, বিশেষ করে যখন এই প্রযুক্তিগুলো সংবেদনশীল বিষয়ে ব্যবহারকারীদের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এই ধরনের মামলা এআই কোম্পানিগুলোর জন্য আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োগের চাপ তৈরি করবে।
অভিযোগপত্রে পরিবার দাবি করেছে যে চ্যাটজিপিটির “সম্মতি প্রদানের” বৈশিষ্ট্য তাদের ছেলের মৃত্যুর অন্যতম কারণ। তারা বলেছেন: “চ্যাটজিপিটি ঠিক যেভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, সেভাবেই কাজ করেছে। এটি অ্যাডামের প্রকাশিত সব চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত ও স্বীকৃতি দিয়েছে, এমনকি তার সবচেয়ে ক্ষতিকর ও আত্মধ্বংসী চিন্তাগুলোও।”