বাংলাদেশ ক্রিকেট মানেই অগণিত মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, ভালোবাসা আর আবেগের এক বিশাল সমুদ্র। যখন প্রতিপক্ষ হয় ভারত, তখন উত্তেজনা আরও বহুগুণ বেড়ে যায়। আজ এশিয়া কাপে সুপার ফোরে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নামছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে এখনো অপরাজিত ভারত নিঃসন্দেহে ফেবারিট, তবে ক্রিকেটে অসম্ভব বলে কিছু নেই যদি পরিকল্পনা কাজে লাগে আর খেলোয়াড়রা নিজেদের সেরা দিনে খেলতে পারেন, তাহলে আজকের ম্যাচেই ঘটতে পারে অঘটন।
দুবাইয়ের উইকেট আর রাতের শিশির ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। এশিয়া কাপে এ মাঠে ভারত সব ম্যাচই রান তাড়া করে জিতেছে। তাই বাংলাদেশ টসে জিতলে ভারতকে আগে ব্যাট করাতে চাইতে পারে। তবে শিশিরের কারণে স্পিনারদের সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনাও আছে। ইতিহাস বলছে, ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টি জয়ে বাংলাদেশ রান তাড়া করেই জয় পেয়েছিল। তাই এই সিদ্ধান্তটাই হতে পারে ম্যাচের প্রথম বড় চ্যালেঞ্জ।
ভারতের ওপেনারদের থামানোই মূল চাবিকাঠি
অভিষেক শর্মা ও শুবমান গিলের ভয়ঙ্কর শুরুর কারণে ভারত ম্যাচের শুরুতেই সুবিধা নেয়। অভিষেকের স্ট্রাইক রেট প্রায় ২০০, আর গিল দ্রুত সেট হয়ে গেলে প্রতিরোধ ভাঙা কঠিন। তাই বাংলাদেশ হয়তো নতুন বলে মেহেদী হাসান মিরাজ বা নাসুম আহমেদকে ব্যবহার করবে। বিশেষ করে গিলের বিপক্ষে ‘ফোর্থ স্টাম্প লাইনে’ বোলিং করলে ক্যাচ বা এলবিডব্লিউর সুযোগ তৈরি হতে পারে।
সূর্যকুমার ও মিডল অর্ডারের ফাঁদ
ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি মিডল অর্ডার। মাঝের ওভারে সূর্যকুমার যাদব ঝড় তুললে ম্যাচ হাত থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। তাই শুধু রান আটকে রাখার চেষ্টা না করে, উইকেট শিকার করাই হবে বাংলাদেশের সেরা কৌশল। ডেথ ওভারে হার্দিক পান্ডিয়া ও শিবম দুবেকে আটকাতে মোস্তাফিজুর রহমানই প্রধান ভরসা। আইপিএলে খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগলে দেখা যেতে পারে আজও আরেকটি ‘ফিজ স্পেশাল’।
বাংলাদেশের ব্যাটিং পরিকল্পনা
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে দুর্দান্ত শুরু করেছিল বাংলাদেশ। আজও সেই আগ্রাসী মানসিকতা জরুরি। তানজিদ হাসান ও সাইফ হাসানের দায়িত্ব থাকবে দ্রুত রান তোলার। বুমরাহ যদি দুর্বল ফর্মে থাকেন, তবে সেটি কাজে লাগানোই হবে সুযোগ। লিটন দাসকে তার পুরনো ছন্দে ফিরতে হবে, কারণ বড় দলের বিপক্ষে অভিজ্ঞতার ব্যবহারই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
আরো পড়ুন : পাকিস্তান ক্রিকেটে নতুন বিতর্ক: ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন খেলোয়াড়রা
মিডল অর্ডার ও ফিনিশারদের ভূমিকা
তাওহিদ হৃদয়ের ফর্ম বাংলাদেশের জন্য বড় আশীর্বাদ। তার ব্যাটিং ইনিংসকে মজবুত করতে পারে। ফিনিশারের ভূমিকায় জাকের আলী বা নুরুল হাসানকে এগিয়ে আসতে হবে। শেষ পাঁচ ওভারে দ্রুত রান তোলা ছাড়া ভারতের বিপক্ষে টিকে থাকার কোনো বিকল্প নেই।
উপসংহার
বাংলাদেশের সামনে আজ এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় প্রমাণ করেছে, এই দলটার ভেতরে লড়াই করার মানসিকতা আছে। সঠিক কৌশল কাজে লাগলে, টিমওয়ার্কে ভর করলে এবং বড় দিনে লিটন-হৃদয়-মোস্তাফিজরা জ্বলে উঠলে ভারতকেও হারানো অসম্ভব নয়। আজকের ম্যাচটাই হতে পারে টাইগারদের ইতিহাস গড়ার মঞ্চ।