বিশ্বজুড়ে উত্তর কোরিয়ার সাইবার হামলার খবর নতুন নয়। এবার সেই দেশটির সরকারি এক হ্যাকারকে উন্মোচন করেছেন দুই স্বাধীন হ্যাকার ‘সেবার’ ও ‘সাইবর্গ’। চার মাস ধরে ওই হ্যাকারদের কম্পিউটারে প্রবেশাধিকার পাওয়ার পর তারা তথ্য প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন।
কীভাবে ঘটল ঘটনা
চলতি বছরের শুরুতে একটি কম্পিউটারে প্রবেশ করেন সেবার ও সাইবর্গ। প্রথমে তারা বুঝতে পারেননি বিষয়টির গুরুত্ব। পরে জানতে পারেন, এটি এমন এক হ্যাকারের কম্পিউটার যিনি সরাসরি উত্তর কোরিয়ার সরকারের হয়ে কাজ করেন।
তদন্ত চালিয়ে তারা সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির নথি, হ্যাকিং টুলস ও অবকাঠামোর প্রমাণ পান, যা উত্তর কোরিয়ার হ্যাকিং অপারেশনের সঙ্গে যুক্ত।
সেবার টেকক্রাঞ্চকে বলেন, “আমরা প্রথমে বুঝতেই পারিনি কত বড় তথ্যের নাগাল পেয়েছি। কিন্তু বুঝতে পারার পর মনে হলো এগুলো জনসমক্ষে আনা জরুরি।”

কেন প্রকাশ্যে আনলেন?
সেবারের ভাষায়, “এই রাষ্ট্রীয় হ্যাকাররা ভুল কারণে মানুষকে টার্গেট করছে। আমি চাই এদের আরও অনেকে উন্মোচিত হোক। তারা এর যোগ্য।”
দুই হ্যাকার তাদের অনুসন্ধান প্রকাশ করেন খ্যাতনামা হ্যাকিং ই-জিন Phrack-এ।
তাদের মতে, এ তথ্য প্রকাশ করলে সাইবার গবেষকরা নতুন উপায়ে উত্তর কোরিয়ার হামলা শনাক্ত করতে পারবেন। একইসঙ্গে আক্রান্ত সংস্থাগুলো হ্যাকারদের অ্যাক্সেস বন্ধ করার সুযোগ পাবে।
সাইবর্গ বলেন, “অবৈধ হলেও আমাদের এই পদক্ষেপ গবেষক সম্প্রদায়ের জন্য বাস্তব প্রমাণ হাজির করেছে। এটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
হ্যাকারকে নিয়ে তাদের অনুসন্ধান
উন্মোচিত হ্যাকারকে তারা “কিম” নামে অভিহিত করেন। তাদের দাবি, কিম হয়তো কেবল উত্তর কোরিয়ার হয়ে নয়, চীনের হয়ে-ও কাজ করছেন। প্রমাণ হিসেবে তারা জানান, চীনের ছুটির দিনে কিম কাজ করতেন না এবং কখনো কখনো গুগল ট্রান্সলেট দিয়ে কোরিয়ান নথি সরলীকৃত চীনা ভাষায় অনুবাদ করেছেন।
সেবার বলেন, “কিমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি। কারণ তিনি কেবল তার শাসকদের শক্তিশালী করতে কাজ করেন, যাঁরা নিজের জনগণকেই বন্দি করে রেখেছেন।”
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ নতুন বাণিজ্য চুক্তি: বাজার প্রবেশাধিকার বাড়াতে ‘ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট’
ঝুঁকি ও সতর্কতা
এই অভিযানের সময় তারা দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কিমের সক্রিয় হ্যাকিংয়ের প্রমাণ পান। সেসব প্রতিষ্ঠানকে তারা সতর্কও করেছেন।
তবে ঝুঁকির ব্যাপারে সেবার বলেন, “আমরা জানি উত্তর কোরিয়ান হ্যাকাররা সাইবার সিকিউরিটি খাতের মানুষকেও টার্গেট করে। তবুও আমি খুব একটা উদ্বিগ্ন নই, তবে এখন থেকে অবশ্যই আরও সতর্ক থাকব।”
হ্যাকটিভিজম নাকি অপরাধ?
নিজেদের হ্যাকটিভিস্ট হিসেবে পরিচয় দেন সেবার ও সাইবর্গ। তারা অনুপ্রেরণা পান কুখ্যাত হ্যাকটিভিস্ট ফিনিয়াস ফিশার থেকে, যিনি আগে স্পাইওয়্যার নির্মাতা FinFisher ও Hacking Team-কে হ্যাক করেছিলেন।
যদিও তারা স্বীকার করেন, কাজটি আইনি দৃষ্টিতে অপরাধ। তবু তাদের বিশ্বাস, বিষয়টি জনসমক্ষে আনা দরকার ছিল।
সেবার বলেন, “আমরা চাই এটি শুধু আমাদের কাছে সীমাবদ্ধ না থেকে গবেষকদের উপকারে আসুক।”