ইংরেজি কল আসলেই বিপদ কিন্তু কেন? কল রিসিভ করলেই ফোন হ্যাক – সত্য না মিথ্যা? ইংরেজি কল রিসিভ

বন্ধুরা আমরা ইতিমধ্যে অনেকেই পেয়েছি ইংরেজি কল। আবার দেখা যাচ্ছে অনেকেই পান নাই কিন্তু তারা খুব তাড়াতাড়ি পেতেও পারেন।

ইংরেজি কলটা আসলে কি?

বর্তমান সবারে ফোনেই একটা ইংরেজি কল দেওয়া হচ্ছে। আমাদের ফোনে ফোন করেই তারা ইংরেজিতে কিছু কথাবার্তা বলে। আর আপনি যদি তাদের ইংরেজি কথা বোঝেন তাহলে দেখা যাবে আপনি তার কথার Answer দিচ্ছেন।

আমি নিজেও ৩ বার এই ইংরেজি কলটি পেয়েছি। তবে এই ফোনগুলো কোন বিদেশি ব্যক্তি বা বিদেশ থেকে করে না। এরা বাংলাদেশ থেকেই বাংলাদেশী নাম্বার অথবা বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস ব্যবহার করে ফোন করে।

ইংরেজি ফোন করে কি বলে?

বন্ধুরা আসলে এই ফোনটা রিসিভ করে আমরা যে ইংরেজি কথাগুলো শুনি বা অফার পাই। এই সম্পর্কে বাস্তব আমার নিজের অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। তাই পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়বেন এতে আপনিও সতর্কতা হবেন এবং আপনার বন্ধুবান্ধবদেরও সতর্কতা করতে পারবেন। কোন বিষয়টি আপনাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে এ বিষয় নিয়ে আজকের পোস্ট:

আমার সাথে বাস্তব ঘটনা যেটা ঘটেছে

আমাকে প্রথমে একটি বাংলাদেশী নাম্বার দিয়ে ফোন করা হয়। আমি সেই ফোনটি রিসিভ করি এবং সাথে সাথে শুনি সে ইংরেজিতে কথা বলতেছে। এবং সে আমাকে জিজ্ঞাসা করতেছে যে আমি ইংরেজিতে কথা বলতে পারি কিনা। তো আমি ইংরেজিতে মোটামুটি কিছু বুঝি সে ক্ষেত্রে আমি তাকে বলছি হ্যাঁ আমি ইংরেজিতে কথা বলতে পারি। তখন সে আমাকে একটি কাজের অফার করে। যেটা ছিল অনলাইনে আমি কাজটি করতে পারব প্রতিদিন ১ থেকে ৫ মিনিট সময় দিয়ে। সেখান থেকে আমরা দৈনিক ২০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারবো। এরকম বিষয় আমাকে বলতেছে ইংরেজিতে।

কিন্তু আমি তার কথা শুনে তেমন একটা রেসপন্স তাকে দেয় নাই তাই সে আমার সাথে প্রথমবার কোন যোগাযোগ করতে পারে নাই।

কিন্তু দ্বিতীয় বার আবারও আমাকে ফোন দেওয়া হয় এটাও বাংলাদেশী নাম্বার ছিল। তখন আমি ভেবেছিলাম যে আগের কলটায় তার যে উদ্দেশ্য ছিল সেটা আমি বুঝতে পারছিলাম না। তাই ভেবেছি আজকের যে কথাই বলবে সেটার আমি তাকে সাথে সাথে Answer দেব। তো তাই ভেবে আমি কলটা রিসিভ করি।

আবারো আমাকে সে ইংরেজিতে কথা বলতে বলে। তখন আমি তার সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলা শুরু করি। তখন সে আমাকে বলে অনলাইনে একটি কাজ রয়েছে যে কাজটি করে আপনি দৈনিক থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারবেন। তখন আমি তাকে বলি আমি এই কাজের প্রতি আগ্রহী রয়েছি এখন আমাকে কি করতে হবে। তখন সে আমাকে বলে যে আমার যে নাম্বারে ফোন দিছে সেই নাম্বারে হোয়াটসঅ্যাপ খোলা আছে কিনা। তখন আমি বলছি আমার এই নাম্বারে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তখন সে আমাকে বলল যে আমার সাথে হোয়াটসঅ্যাপে তারা যোগাযোগ করবে এখন তারা ফোনটি কেটে দিবে।

তো সে আমার ফোনটি কেটে দিল। তারপর আমার whatsapp এ এসে বিদেশি একটি নাম্বার। এটা সম্ভবত হবে কোন একটা অ্যাপস থেকে এই নাম্বারটি ব্যবহার করেছে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে। তখন তার সাথে আমি কথা বলা শুরু করি।

আমার তার সাথে কথা বলার উদ্দেশ্য ছিল যে সে কি কারণে আমাদেরকে এরকমভাবে ইংরেজিতে ফোন করে। এবং তারা আমাদেরকে অনলাইনে মাত্র ২ মিনিট কাজ করে কিভাবে ১০০০ থেকে ২ হাজার টাকা আয় করা যায়। এছাড়া আমার আশেপাশে আরো মানুষকে তারা ফোন দিয়েছিল। কিন্তু তারা এ বিষয়ে বুঝে কিছুই বুঝতে পারেনি। তাই আমি তাদের সাথে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা শুরু করি।

তাদের সাথে আমার হোয়াটসঅ্যাপের যোগাযোগ গল্প

আমাকে তারা প্রথমে হাই পাঠায়। তারপর আমি তাদেরকে হ্যালো বলি। তখন তারা আমাকে বলে আমি অনলাইনে কাজ করবো কিনা। তখন আমি তাদেরকে বলি আমি কাজ করতে আগ্রহী কিন্তু এটি কি কাজ। তখন তারা আমাকে একটি গুগলের প্রোডাক্ট রিভিউ লিখতে একটা লিংক পাঠায়। এবং সে বলে প্রতিটা রিভিউজ জন্য আমি তোমাকে ১০০ টাকা করে দিব।

সেই লিংকে আমি ক্লিক করে আমাকে গুগল ম্যাপে নিয়ে যায়। তখন তার কথামতো আমি একটা রিভিউ লিখে একটি স্ক্রিনশট তাকে শেয়ার করে। তখন আমাকে সে বলে তুমি ভালো কাজ করেছো। তারপর আমাকে আরো একটা লিংক দেয়। এভাবে আমাকে টোটাল তিনটি লিংক দেয়। আর এই তিনটায় লিংকে ছিল গুগল ম্যাপে রিভিউ দেওয়া।

আমি তার কথা মতো তিনটা লিংকে ক্লিক করে তিনটাই রিভিউ দিয়েছিলাম এবং সেখান থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে তার হোয়াটসঅ্যাপে দি। এরপর সে আমাকে বলল যে আজকের কাজ তোমার শেষ হয়ে গেছে। এখন তোমার পেমেন্টটি তুমি নিতে পারো। তখন সে আমাকে পেমেন্ট নেওয়ার জন্য একটি টেলিগ্রাম একাউন্টের ইউজার নাম দেয়। সেখানে আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করি।

আবার তাকে স্ক্রিনশটগুলো দিয়ে এবং আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে তারা একটি কোড দেয়। সেই কটি আমি টেলিগ্রামের তাকে আবার শেয়ার করি। এতে সে বুঝতে পারে আমি সেই ব্যক্তি এজন্য সে আমাকে পেমেন্ট করার জন্য বিকাশ নাম্বার চায়। তখন আমি তাকে শুধুমাত্র বিকাশ নাম্বার টি দিই। এবং তার কথামতোই দেখা গেল মধ্য আমার ফোনে ৩০০ টাকা দিয়েছে বিকাশে।

ওকে বন্ধুরা এরপর সেদিন আর আমার সাথে তাদের কোন কথা হয় না। তারা বলছে আমার আজকের কাজ শেষ আমাকে আগামীকাল তারা আবারো কাজ দিবে। তাদের যেই কথা সেই কাজ। আমাকে আবারও ঠিক পরবর্তী দিনের সকাল দশটার সময় মেসেজ করা হয় আমার টেলিগ্রামে। সেখানে আবারো তিনটি গুগল ম্যাপে রিভিউ দিতে বলা হয়। যেটি আমি আবারও তাদেরকে কাজটি সম্পন্ন করে দিয়ে দি।

এই দিনই প্রতারনা শুরু

কিন্তু এই দিন আমাকে আবারো পেমেন্ট দেওয়ার কথা ৩০০ টাকা। আর তখনই সে আমাকে বড় একটি পোস্ট শেয়ার করে। সেটি মূলত একটি ইনভেসমেন্ট ওয়েবসাইট। সেখানে সর্বনিম্ন প্যাকেজটি ছিল ৩০০০ টাকা। আর সে তখনই আমাকে বলে যে এখানে সর্বনিম্ন প্যাকেজটি রয়েছে তিন হাজার টাকা এই প্যাকেজটি আমি যদি একটিভ করি। তাহলে আমাকে প্রতিদিন আরো পাঁচটি করে কাজ দেওয়া হবে। এবং তারা আমাকে আরো ফ্রিতে তিনটি কাজ দেবে। টোটাল আমাকে ৮ টি কাজ দেওয়া হবে। আর এই ৮ টি কাজ সম্পন্ন করে দিলেই আমি পেয়ে যাব ৮০০ টাকা।

কিন্তু আমি এইসব বিষয়ে আগেই জেনে ছিলাম যার কারনে আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিই। আর তখনই আমাকে এসে বারবার বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় অফার শেয়ার করে। তখন আমাকে আবার আরেকটি পোস্ট শেয়ার করে। সেখানে লেখা ছিল আমি যদি ২০০০ টাকা তাদেরকে দিই তাহলে সে আমাকে তিন ঘন্টা পর ৩০০০ টাকা ব্যাক দিবে। আবার সেখানে লেখা ছিল ৫০০০ টাকা দিলে সাত হাজার টাকা ব্যাক। আবারো লেখা ছিল দশ হাজার টাকা দিলে ২১ হাজার টাকা ব্যাক পাবেন 6 ঘন্টার মধ্যে।

তো বন্ধুরা বুঝতে তো পারছেন আমার সাথেই তারা দুটি লোভনীয় অফার শেয়ার করেছিল। যেটার ফাঁদে আমি কখনোই পা দেয় নি। কারন আমি এটা আগে থেকেই জানতাম। আর আমি আগে থেকেই অনলাইনে ইনভেসমেন্ট এবং ফ্রিতে যে সকল ওয়েবসাইট আসে সে সকল সাইডে কাজ করে অভিজ্ঞতা রয়েছে। যার কারনে আমি তাদের ফাঁদে পা দিইনি।

আর তখনই আমি তাকে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে তাকে ডিলিট করে দিও। এবং তাদের সাথে আমি আর কোন যোগাযোগ করি নাই।

আর ও হ্যাঁ, তারা একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে জয়েন করতে বলেছিল। সেখানে আমি জয়েন করে দেখি আমাদের বাংলাদেশী অনেকেই রয়েছে। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজারের মতো মেম্বার ছিল তাদের ওই গ্রুপে। এবং সেখানে প্রতিনিয়ত পেমেন্ট প্রুফের স্ক্রিনশট শেয়ার করতেছে ইউজাররা। এটি আমি আগেই জানতাম যে এফেক্ট অ্যাকাউন্ট খুলে এরকম ভাবেই ফেক স্ক্রিনশট শেয়ার করা যায়। যার কারনে আমি তাদের গ্রুপটা ফেক মনে করছিলাম আগেই।

আপনার জন্য সতর্কতা

বন্ধুরা আমি অনলাইন বিষয় ভালো বুঝি বিদায় তাদের ফাঁদে পা দি নি। কিন্তু আমার জায়গায় যদি অন্য কেউ সাধারণ একজন ব্যক্তি থাকতো। তাহলে মনে হয় সে লোভে পড়ে যেকোনো একটি কাজ করে ফেলতো। এবং সে দেখতো গ্রুপে তো হাজারো মানুষ রয়েছে যারা কাজ করে প্রতিনিয়ত পেমেন্ট পাচ্ছে। তাহলে আমি কাজ করলে ১০০% পেমেন্ট পাব। এবং আমি তাদের কাছ থেকে ভালো টাকা ইনকাম করতে পারব। এটাই হয়তো অনেকেই ভেবেছে এবং করেছ। যারা করেছে তারা অনেকেই প্রতারিত হয়েছে।

তাই আপনি এই কাজটি কখনই বলে করবেন না। আপনাকে যদি কেউ কাজের অফার করে তাহলে অবশ্যই দেখে নিবেন যে সে কিভাবে আপনাকে কাজগুলো দিচ্ছে। এখানে আমাকে বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় অফার শেয়ার করছে। এটা আপনাকে করবে সেটা না আপনাকে অন্য অফার দিবে। আর এই অফারের ফাঁদে পড়লেই আপনার সর্বনাশ।

তো বন্ধুরা যদি আপনার কাছে এরকম কল আসে এবং তারা ইংরেজিতে কথা বলে। তাহলে আপনি সাথে সাথে তাদের ফোনটি কেটে দিবেন এবং আপনার হোয়াটসঅ্যাপে যদি তারা যোগাযোগ করতে চায়। তাহলে আপনি তাদের সাথে কখনই যোগাযোগ করবেন না।

কল রিসিভ করলেই কি ফোন হ্যাক হয়ে যাবে?

আসলে ফেসবুকে বাংলাদেশি একটি পুলিশ ভাই প্রতিনিয়ত সতর্কতামূলক ভিডিও আপলোড করে থাকেন। এবং সে তার ভিডিওতে বলেছিল এরকম কল রিসিভ করলেই ফোন হ্যাক হয়ে যাবে। কিন্তু এটি যুক্তি সংগত না। কখনই ফোন রিসিভ করলে মোবাইল ফোন হ্যাক হয় না। যত সময় না ঐ ব্যক্তি তার নিজের তথ্য শেয়ার করে। যদি আপনি তার ফোনটা রিসিভ করেন এবং তাকে আপনার কোন তথ্য শেয়ার না করেন তাহলে কোনদিনই আপনার ফোন হ্যাক করতে পারবে না। তো বন্ধুরা সেই পুলিশ ভাইটি এই কথায় পরবর্তী ভুল স্বীকার করেছে।

বিকাশ-নগদ একাউন্ট হ্যাক করে যেভাবে হ্যাকার

আশা করি বন্ধুরা আমি আপনাদেরকে কি বোঝাতে চেয়েছি সেটি আপনি বুঝতে পেরেছেন। এইরকম সতর্কতা মূলক এবং আরো বিভিন্ন ধরনের টিপস পেতে এখনি আমাদের গুগল নিউজ ফলো করে রাখুন।

Post Share Now

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *