মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করার দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বেলা সোয়া দুইটা থেকে তাঁরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই কর্মসূচি শুরু করেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অনশন কর্মসূচি
আজ ষষ্ঠ দিন ধরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা। রোববার থেকে তাঁরা তিন দফা দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। তবে পুলিশি বাধার মুখে সেদিন দুপুরে তাঁরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে অবস্থান নেন এবং সেখান থেকেই অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। বুধবার তাঁরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। বৃহস্পতিবার “মার্চ টু যমুনা” কর্মসূচি পালনের ঘোষণা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়।
সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, অনশন অব্যাহত রাখার ঘোষণা
বৃহস্পতিবার সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর শিক্ষকদের বাড়িভাড়া মূল বেতনের ৫ শতাংশ (ন্যূনতম ২ হাজার টাকা) দেওয়ার প্রস্তাব দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১ নভেম্বর থেকে ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া দেওয়া সম্ভব হবে এবং সেটি ন্যূনতম ২ হাজার টাকার কম হবে না। তবে শিক্ষক–কর্মচারীরা এতে সন্তুষ্ট নন। তাঁদের দাবি, চলতি বছর ১০ শতাংশ এবং আগামী বছর আরও ১০ শতাংশ বাড়াতে হবে।
‘দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মস্থলে ফিরব না’ — আন্দোলনকারীদের ঘোষণা
আমরণ অনশন শুরু করা শিক্ষক–কর্মচারীরা জানিয়েছেন, তাঁদের তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কর্মস্থলে ফিরবেন না। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন,
“আমাদের দাবি একটাই — ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া দিতে হবে। শিক্ষকেরা আর কোনো কথা শুনতে চান না। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই আমরণ অনশন চলবে।”
আরো পড়ুন: আজ থেকে এইচএসসি ফল পুনর্নিরীক্ষণ আবেদন শুরু, প্রতি বিষয়ে ফি ১৫০ টাকা
তিনি আরও জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের সংখ্যা বাড়বে। দেশের সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলা কর্মবিরতিও অনির্দিষ্টকাল চালু থাকবে। রোববার থেকে শিক্ষক–কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরাও নিজ নিজ এলাকায় আন্দোলনে যোগ দেবেন।
‘শিক্ষকেরা ভালো নেই, তবু লড়াই করছি’ — অনশনরত শিক্ষক আজিজার রহমান
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির পশ্চিম ফুলমতি হাইস্কুলের ৫৬ বছর বয়সী শিক্ষক আজিজার রহমান এই আমরণ অনশনে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন,
“যতক্ষণই লাগুক, অনশন চালিয়ে যাব। সরকারের উচিত আমাদের কষ্ট বুঝে সম্মানজনকভাবে বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা।”
শরীর খারাপ হলে কী করবেন — জানতে চাইলে এই মাধ্যমিক শিক্ষক বলেন,
“করার কিছু নেই। শিক্ষকেরা ভালো নেই, তবু সরকার আমাদের মূল্য দেয় না। আমি চাই, পরের প্রজন্ম যেন আমাদের মতো গ্লানিতে না ভোগে। শিক্ষক যেন মাথা উঁচু করে সমাজে বাঁচতে পারেন — সেই স্বপ্ন নিয়েই এই অনশন।”
দাবি আদায়ের আন্দোলনে দিন দিন বাড়ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের অংশগ্রহণ। সরকারের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ থাকলেও তাঁরা এখন পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান থেকে একচুলও সরেননি। শিক্ষক–কর্মচারীরা বলছেন, ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই আমরণ অনশন অব্যাহত থাকবে।