পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তে চলমান সংঘাত সম্প্রতি নতুন মাত্রা পেয়েছে, যা অনেক বিশ্লেষক “ভারত-পাকিস্তান ছায়াযুদ্ধ” হিসেবে বর্ণনা করছেন। গত কয়েকবছর ধরে তেহরিক-এ-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে। ইসলামাবাদ এই অভিযোগ তুললেও কাবুলের তালেবান সরকার তাতে প্রাত্যহিক গুরুত্ব দেয়নি।
পাকিস্তান সীমান্তে টিটিপি হামলার জবাবে পাকিস্তানি সেনা ও বিমান বাহিনী আফগানিস্তান অভ্যন্তরে অভিযানে নামে। তাদের লক্ষ্য ছিল টিটিপির ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করা। এই হামলা-প্রতিরোধের চক্র এখনো চলমান, যা সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
চীন আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদ উত্তোলনে সহায়তা করছে, যা কাবুল সরকারের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। সেই কারণে কাবুল-ইসলামাবাদ সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান সীমান্তে সন্ত্রাসী হামলা এবং আফগানিস্তান-ভারত সম্পর্কের প্রভাব এই সমঝোতাকে জটিল করেছে। ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, আফগান সীমান্তের সন্ত্রাসী হামলায় ভারতের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের সহযোগিতা রয়েছে।
আরো পড়ুন : ‘হামাসের সঙ্গে কথা বলেছি, দাবি ট্রাম্পের
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সরাসরি অভিযান করাও কঠিন। সীমান্তের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য এবং আফগানিস্তান থেকে হামলার সম্ভাবনা পাকিস্তানের সেনাশক্তি বিভক্ত করে। এর ফলে সীমান্ত পরিস্থিতি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নিরাপত্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক নীতি দুইমুখী। একদিকে আফগান তালেবানদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দিয়েছে, অন্যদিকে সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা নেই। আফগান সীমান্তে টিটিপি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য “নেমেসিস” হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ অবস্থায় দিলি কাবুল সম্পর্ককে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ভারত আফগানিস্তানকে “ছায়া উপনিবেশ” হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অনেক কূটনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন। ভারতের লক্ষ্য হলো পাকিস্তানের সামরিক ও কূটনৈতিক চাপকে সীমান্ত অঞ্চলে বিভক্ত করা।
সীমান্তের এই জটিল পরিস্থিতি, সন্ত্রাসী হামলা, দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক চাপ এবং ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থকে মিলিয়ে আফগানিস্তান-পাকিস্তান-ভারত সম্পর্ক এখন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নজরের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।