বাংলাদেশের রাজনৈতিক আবহাওয়া আজও উত্তপ্ত। গত জুলাইর গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে এসেছে বড় পরিবর্তন। এমন সময়ে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান দিয়েছেন এক তীব্র সতর্কবার্তা। তার মতে, আওয়ামী লীগ যদি আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে, তাহলে কেউই রেহাই পাবে না।
টেলিভিশনে সরাসরি হুঁশিয়ারি
সোমবার সন্ধ্যায় একটি জনপ্রিয় টকশোতে অংশগ্রহণকালে রাশেদ খান প্রকাশ্যেই এই উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে, সেখানে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর হাত রয়েছে। এই পরিকল্পিত অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির মাধ্যমে তারা পুনরায় ক্ষমতার পথ খুঁজছে।
রাশেদ খানের ভাষায়, “আমরা যারা জুলাইয়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছি, যারা সাহসের সাথে দাঁড়িয়েছিলাম, আওয়ামী লীগ ফিরলে আমাদের কারো ভবিষ্যৎই নিরাপদ নয়।”
উপস্থাপককে প্রত্যক্ষ প্রশ্ন
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে রাশেদ খান সরাসরি উপস্থাপক মনজুর আল মতিনকে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, “আপনি যদি ভেবে থাকেন আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় ফিরলে আপনি নিরাপদ থাকবেন, তাহলে ভুল ভাবছেন। জুলাইয়ে আপনার যে ভূমিকা ছিল, তার জন্য আপনাকেও জবাবদিহি করতে হবে।”
এই প্রশ্নের মাধ্যমে তিনি মূলত সবাইকে সচেতন করতে চেয়েছেন যে, আওয়ামী লীগের প্রতিশোধপ্রবণতা কতটা গভীর হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতার রহস্য
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-স্থানীয় জনগণের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রাশেদ খান এই সংঘর্ষগুলোকে স্বাভাবিক বলে মনে করছেন না। তার ভাষায়, “এসব সংঘর্ষ আকস্মিক নয়। এর পেছনে রয়েছে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।”
তিনি আরও জানান, রাজনৈতিক সূত্রে তার কাছে বিভিন্ন তথ্য এসেছে যা প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ তাদের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে এই অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে।
ভয়ানক পূর্বাভাস
রাশেদ খানের মতে, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে দেশে ফিরে আসবে ফ্যাসিবাদী শাসন। শুধু তাই নয়, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে পুনরায় গণহত্যা পর্যন্ত ঘটতে পারে।
“আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, যারা একবার ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে এবং সেই ক্ষমতা হারিয়েছে, তারা প্রতিশোধের জন্য যে কোনো সীমা অতিক্রম করতে পারে,” বলেন এই গণ অধিকার নেতা।
রাশেদ খান একটি চাঞ্চল্যকর তথ্যও প্রকাশ করেন। তার দাবি অনুযায়ী, এস আলম গ্রুপ দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগকে আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রদান করেছে। এই অর্থের মাধ্যমেই নাকি তারা দেশব্যাপী নানা ধরনের চক্রান্ত বাস্তবায়ন করছে।
আরো পড়ুন:
জিয়ার কবর ভুয়া দাবি, আ.লীগ মহিলা কর্মীকে মারধর এলাকাবাসী
গণমাধ্যম ও বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সূত্রে পাওয়া এই তথ্য সত্য হলে, দেশের স্থিতিশীলতার জন্য এটি একটি বড় হুমকি।
রাশেদ খান স্পষ্ট করে বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যেভাবে আওয়ামী লীগের পতন ঘটানো হয়েছে, ঠিক সেভাবেই তাদের যে কোনো রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হবে।
তার আহ্বান, “আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। যে কোনো মূল্যে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে হবে।”
রাশেদ খানের এই বক্তব্য শুধু একটি রাজনৈতিক বিবৃতি নয়, বরং এটি জাতির কাছে একটি আবেদনও। তিনি চান, দেশের মানুষ যেন ভুলে না যায় গত পনের বছরের অভিজ্ঞতা। যেন আর কখনো এ দেশে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত না হয়।
গণ অধিকার পরিষদের এই নেতার বক্তব্য নিঃসন্দেহে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা। তবে সময়ই বলে দেবে তার এই আশঙ্কা কতটুকু বাস্তব।
ডিসক্লেমার: এই প্রতিবেদনটি বিভিন্ন অনলাইন সোর্স থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে পুনর্লিখন করা হয়েছে। এখানে প্রকাশিত তথ্য ও মতামত কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্যের ওপর নির্ভরশীল।