বর্তমান ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন হ্যাক হওয়া একটি বড় নিরাপত্তা ঝুঁকি। ব্যাংকিং থেকে শুরু করে যোগাযোগ, এমনকি দিকনির্দেশনাও এখন স্মার্টফোননির্ভর। তাই ফোন হ্যাক হলে ব্যক্তিগত জীবন ও আর্থিক নিরাপত্তা দুটোই বিপদের মুখে পড়ে। কীভাবে বুঝবেন আপনার ফোন হ্যাক হয়েছে, কীভাবে প্রতিরোধ করবেন এবং আক্রান্ত হলে কী করবেন—এসব নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন।
স্মার্টফোন হ্যাক: যেভাবে ঘটে
বিশ্বজুড়ে সাইবার অপরাধীরা নানা কৌশলে ফোনে প্রবেশের চেষ্টা করে। iPhone কিংবা Android—দুই ধরনের ফোনই ঝুঁকির মধ্যে। সাধারণত ব্যবহারকারীকে বিভ্রান্ত করে কোনো ক্ষতিকর লিংকে ক্লিক করানো বা ভুয়া অ্যাপ ডাউনলোড করিয়ে হ্যাক করা হয়। আবার অনেক সময় পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক বা “সিম সুইপ” পদ্ধতির মাধ্যমেও আক্রমণ ঘটে। আক্রান্ত ফোনের ডেটা সহজেই হ্যাকারদের হাতে চলে যেতে পারে, বিশেষ করে যেখানে একই পাসওয়ার্ড একাধিকবার ব্যবহার করা হয়।
১. ব্যাটারি দ্রুত শেষ হওয়া
ফোন হ্যাক হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো অস্বাভাবিকভাবে ব্যাটারি ড্রেইন হওয়া। যদি ফোন ব্যবহার না করেও ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যায় বা ডিভাইস গরম হতে শুরু করে, তবে এটি ইঙ্গিত দেয় যে পেছনে কোনো ম্যালওয়্যার বা স্পাই অ্যাপ কাজ করছে।
২. ফোন বিল অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া
হঠাৎ করে মোবাইল বিল বা ডেটা ব্যবহারে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখা গেলে সেটি হ্যাকের সম্ভাবনা নির্দেশ করে। অনেক সময় হ্যাকাররা আপনার ফোন ব্যবহার করে অজানা সার্ভারে তথ্য পাঠায়, যার ফলে ব্যান্ডউইথ খরচ বেড়ে যায়।
আরো পড়ুন: রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যানের পর ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক স্থগিত
৩. অচেনা অ্যাপ বা পরিবর্তন লক্ষ্য করা
যদি হঠাৎ করে অচেনা অ্যাপ ইনস্টল হয়ে যায়, কোনো অ্যাপ নিজে থেকেই খুলে যায় বা ধীরে কাজ করে, তাহলে এটি ফোনে ক্ষতিকর সফটওয়্যার ইনস্টলের ফল হতে পারে। নিজের ফোনের অ্যাপ লিস্ট নিয়মিত পরীক্ষা করা তাই অত্যন্ত জরুরি।
৪. অস্বাভাবিক নোটিফিকেশন ও সেটিংস পরিবর্তন
অপ্রত্যাশিত পপ-আপ, ভেরিফিকেশন কোড বা টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন বার্তা আসা শুরু হলে সতর্ক হন। এছাড়া ক্যামেরা, মাইক্রোফোন বা লোকেশন পারমিশনে হঠাৎ পরিবর্তন দেখা গেলে সেটিও হ্যাকিংয়ের ইঙ্গিত হতে পারে।
৫. অনলাইন অ্যাকাউন্টে লগইন সমস্যা
যদি আপনি হঠাৎ গুগল, অ্যাপল আইডি বা অন্য কোনো অনলাইন অ্যাকাউন্টে লগইন করতে না পারেন, তাহলে সেটি সবচেয়ে বড় সতর্কবার্তা। অনেক ক্ষেত্রে হ্যাকাররা প্রথমেই আপনার অ্যাকাউন্ট দখল করে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে দেয়।
৬. অ্যান্টিভাইরাসে ম্যালওয়্যার শনাক্ত হওয়া
বিশ্বস্ত অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার (যেমন Bitdefender, Norton, Kaspersky, AVG বা McAfee) ফোন স্ক্যান করে ম্যালওয়্যার বা স্পাইওয়্যার সনাক্ত করতে পারে। সন্দেহজনক ফাইল বা অ্যাপ মুছে ফেলার পর ফোন রিস্টার্ট করে পুনরায় স্ক্যান করা উচিত, যেন ফোনটি পুরোপুরি নিরাপদ হয়।
করণীয়
যদি নিশ্চিত হন যে আপনার ফোন হ্যাক হয়েছে—
- দ্রুত সব পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।
- ব্যাংক ও আর্থিক অ্যাকাউন্টগুলো চেক করুন।
- সন্দেহজনক অ্যাপ মুছে ফেলুন।
- প্রয়োজনে ফোনকে ফ্যাক্টরি রিসেট করুন।
- বন্ধু ও পরিচিতদের সতর্ক করুন যেন তারা কোনো সন্দেহজনক বার্তা উপেক্ষা করেন।
প্রতিরোধই সর্বোত্তম সুরক্ষা
স্মার্টফোনকে সুরক্ষিত রাখতে সবসময় অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোর (Google Play, Apple App Store) থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করুন, পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার এড়িয়ে চলুন, নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট দিন এবং শক্ত পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
স্মার্টফোন হ্যাক হওয়া মানেই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাংকিং ডেটা ও অনলাইন গোপনীয়তা বিপন্ন। তবে সচেতনতা ও নিরাপত্তা অভ্যাস গড়ে তুললে এই ঝুঁকি অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব। ফোনের আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখলেই দ্রুত পদক্ষেপ নিন—তাতেই রক্ষা পেতে পারেন বড় বিপদ থেকে।